ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আসাদের নামে নোটিশ রাজশাহী আ’লীগে হতাশা

নিজস্ব প্রতিবেদক | রাজশাহী | প্রকাশিত: ০২:০৮ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রাজশাহী জেলা লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদকে কারণ দর্শানোর নোটিশে তৃণমূল আওয়ামী লীগে নেমে এসেছে চরম হতাশা। সংকট নিরসনে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর সভার দিকে তাকিয়ে রয়েছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। সংকট মেটাতে ওই দিন কেন্দ্রীয় নেতারা জেলার কার্যনির্বাহী পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেদিনই সংকট কেটে যাবে বলে আশাবাদী নেতারা। তবে ২২ সেপ্টেম্বরের ওই বৈঠক পেছাতে পারে এমনিই আভাস দিয়েছেন নেতারা।

এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জরুরি সভা থেকে এ ঘোষণা আসে। ওই দিনের সভায় বিবাদমান পক্ষগুলোকে নিয়ে বৈঠক করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবাদুল কাদের। তবে এত দিনও কোনো সুরাহা হয়নি।

এর তিন দিন পরেই জেলার সাধারণ সম্পাদক আসাদ, রাজশাহী- আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল হক মাসুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। গত ১১ সেপ্টেম্বর ওই নোটিশ রাজশাহীতে পৌঁছে। কবে এখন পর্যন্ত এই তিন নেতার কেউই জবাব দেননি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আসাদুজ্জামান আসাদের হাত ধরে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ প্রাণ পেয়েছে। অথচ তারই বিরুদ্ধে শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ অভিযোগ ভিত্তিহীন।

ওই নোটিশে বলা হয়, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অনুমতি ব্যতীত সংগঠনের যে কোনো পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকে বহিষ্কার কিংবা অবাঞ্ছিত ঘোষণা দলের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থি। এটি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অমান্য ও দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ করার শামিল।

কেন্দ্রীয় সংসদে অভিযোগ পাঠানোর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ করে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। কেন আবদুল ওয়াদুদ দারাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে তার লিখিত জবাব ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

একই অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল হক মাসুদকেও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। মাসুদ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে দলের মনোনয়ন চেয়েছেন। তবে সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারাকে নেটিশ দেয়া হয়েছে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায়। তাকে দেয়া কারণ দর্শানোর নোটিশে জানতে চাওয়া হয়েছে-সংসদ সদস্য ও নেতা হিসেবে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন, স্থানীয় নেতৃবৃন্দের দলীয় ঐক্য, সংহতি, সম্প্রীতি, আনুগত্য ও শৃংখলা বজায় রাখতে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথ ছিল কিনা। তিনিও জবাবের জন্য ১৫ দিনের সময় পেয়েছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, গত ২৮ আগস্ট জেলার দুর্গাপুরে শোক দিবসের আলোচনা সভা ঘিরে উত্তাপ ছড়িয়েছে। দুর্গাপুর ডিগ্রি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত ওই সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ প্রধান অতিথি ছিলেন।

দুর্গাপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য আবদুল মান্নান ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা তাজুল ইসলাম ফারুক ও জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল হক মাসুদ। সভায় ওই আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগ উঠেছে, ওই সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ দারাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। তবে এ অভিযোগ সাজানো বলে দাবি করেছেন সভায় অংশ নেয়া আহসান উল হক মাসুদ। তিনি বলেন, সভায় সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা দেয়া হয়নি। কোনো বক্তা এমন বক্তব্যই দেননি। তাদের কাছে সেদিনের পুরো সভার রেকর্ড আছে। কেন্দ্রে মিথ্যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আসাদ জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের আশ্রয়স্থল। দলকে সংগঠিত করতে রাতদিন এক করে কাজ করছেন। অথচ তারই বিরুদ্ধে শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগ। আর সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে পাওয়ায় তাকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। এনিয়ে কতিপয় সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল বুঝিয়েছেন। সময়মতই তারা ওই নোটিশের জবাব দেবেন বলে জানান মাসুদ।

এদিকে সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারার বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তিনি নির্বাচিত হবার পর থেকেই দলীয় নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে জামায়াত-বিএনপি তোষণ করছেন। তার সুপারিশে চাকরিবাকরিসহ পুনর্বাসিত হচ্ছে জামায়াত-বিএনপি।

সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিসহ সরকারের সকল উন্নয়ন প্রকল্প লুটেপটে খাচ্ছেন সংসদ সদস্য ও তার লোকজন। অথচ কোথায় কি উন্নয়ন হচ্ছে তার হদিসই পাচ্ছেন না তৃণমূল নেতাকর্মীরা। আবদুল ওয়াদুদ দারার এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে সেদিনের সভায় তৃণমূলের দুই-একজন নেতা বক্তব্য রাখেন। এ বক্তব্যকে ভিত্তিভাবে কেন্দ্রে পৌঁছেছে।

কেবল আবদুল ওয়াদুদ দারা-নন একই অভিযোগ রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এবং রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধেও।

সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বর কাউন্সিলে ওমর ফারুক চৌধুরী সভাপতি এবং আসাদুজ্জামান আসাদ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর প্রায় এক বছরের মাথায় ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায় জেলা আওয়ামী লীগ। দায়িত্ব নেয়ার পর দলীয় ও জাতীয় কর্মসূচিতে অনিয়মিত ছিলেন ওমর ফারুক চৌধুরী। জেলা কার্যালয়েও আসতেন না। একরকম সভাপতিকে ছাড়াই আসাদ একাই সংগঠনকে এগিয়ে নেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক প্রভাষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে এবছরের ৯ মে পর্যন্ত ১৪টি কার্যনির্বাহী কমিটির সভা, চারটি বর্ধিত সভা এবং ১০টি অন্যান্য সভা হয়েছে। বেশিরভাগ সভায় সভাপতি অংশ নেননি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজশাহী সফরের প্রস্তুতি সভায়ও ওমর ফারুক চৌধুরী ছিলেন না। তৃণমূল নেতাদের খোঁজখবরই রাখেন না তিনি।

নির্বাচিত হবার পর তৃণমুলের সঙ্গে যোগ রাখেননি আয়েন উদ্দিনও। নির্বাচনী এলাকায় কোনো দলীয় সভায় তিনি উপস্থিত হন না। সেখানে আসাদুজ্জামান আসাদ নেতাকর্মীদের নিয়ে কর্মসূচি পালন করেন।

এবিষয়ে জেলার গোদাগাড়ী পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বাবু বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে রাজনীতি করছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। তার চারপাশে এখন জামায়াত-বিএনপি থেকে আসা নব্য আওয়ামী লীগ। এদেরই চাকরি দিচ্ছেন এমপি। তাদের সঙ্গে নিয়ে এলাকায় উন্নয়নের নামে লুটপাট করছে। অথচ দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। অথচ জেলা সম্পাদক আসাদ জেলা আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী ভিত্তিতে এনে দাঁড় করিয়েছেন।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএ/এমএস

আরও পড়ুন