দিন দিন ফুলে যাচ্ছে বাবলীর পা
বাবলী আক্তার। বয়স সাত বছর। মায়ের পেটে থাকতেই বাবা নিখোঁজ। জন্মের পর বাবাকে দেখেনি সে। এখন দুরারোগ্য ব্যাধিতে মৃত্যু পথযাত্রী ফুটফুটে এই শিশুটি। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নড়তেও পারে না। পায়খানা প্রস্রাবসহ প্রতিটা কাজে তাকে সহযোগিতা করেন তার মা খাতুন বেগম।
বাবলী আক্তার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছতিয়া গ্রামের সরফ মিয়ার মেয়ে। পরিবারে অভাবের কারণে চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে তার। এতে দিন দিন অবস্থার অবনতি হচ্ছে শিশুটির।
জানা গেছে, চার ভাই বোনের মধ্যে বাবলী আক্তার সবার ছোট। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার বড় ভাই জসিম মিয়া (২০)। তিনি দিন মজুরের কাজ করেন । আগে মা খাতুন বেগম মানুষের বাড়িতে কাজ করে কিছু উপার্জন করতেন কিন্তু বর্তমানে বাবলির দেখাশুনা করার জন্য বাড়ির বাইরে যেতে পারেন না তিনি। অভাবের কারণে বাবলীর বড় বোন লাভলী বেগমের লেখাপড়া বন্ধ। সবার বড় লাকী বেগম ঢাকায় গার্মেন্টেসে কাজ করে সেখান থেকে পরিবারে টাকা পাঠাতেন। কিন্তু তার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সেটাও এখন বন্ধ।
বাবলী আক্তারের মা খাতুন বেগম জাগো নিউজকে জানান, বাবলীর যখন আড়াই বছর বসয় তখন বড় ছেলে অসুস্থ হয়। তিনি ছেলেকে নিয়ে কিছু দিন হাসপাতালে ছিলেন। ছেলে সুস্থ হওয়ার পর বাড়িতে এসে দেখেন বাবলী একটু খুঁড়িয়ে হাঁটছে । প্রথম ২/৩ দিন বিষয়টি স্বাভাবিক মনে হলেও পরে দেখেন সে খুঁড়িয়েই হাঁটছে। তখন বাড়ির সবাইকে জিজ্ঞাস করেন- বাবলীর কী হয়ছে? সে কী কোনো আঘাত পেয়েছে? কিন্তু কেউ কিছুই জানে না। পরে বাবলীকে বাড়ির পার্শ্ববর্তী এক কবিরাজের কাছে নিয়ে যান তিনি। এ সময় কবিরাজ মালিশ করতে গেলে বাবলী চিৎকার করতে থাকে, কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যায়। এভাবে দুই দিন কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়ায় কবিরাজ জানিয়ে দেন- তিনি পারবেন না। যে অজ্ঞান হয়ে যায় তার চিকিৎসা করা যাবে না । বাবলীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
খাতুন বেগম আরও জানান, এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান তিনি। ডাক্তার চিকিৎসা দিয়ে তাকে সিলেট নিয়ে যেতে বলেন । তিনি আবারও মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে বাবলীকে ভর্তি করেন। সেখানে এক মাস চিকিৎসা করানোর পর দেখতে পান দিন দিন বাবলীর পা ফুলছে। হাসপাতালে তার সব ধরনের টেস্ট করানো হয় । টেস্টের রেজাল্ট পেয়ে অবশেষে ওসমানী হাসপাতালের ডাক্তাররা বাবলীকে ভারতের মাদ্রাজ নিয়ে যেতে বলেন।
বাবলীর মা বলেন, যেখানে ভাত খাওয়ার টাকা নেই সেখানে ভারত যাব কীভাবে? তাই ভারত যাওয়া হয়নি। সেই থেকে এভাবেই বাড়িতে পড়ে আছে বাবলী। মাঝে মাঝে কবিরাজি চিকিৎসা করাই। কিন্তু কবিরাজের টাকা যোগাড় করতে না পারায় সেটাও নিয়মিত হয় না। এই অবস্থায় বাবলীর চিকিৎসায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আকুতি জানান তিনি।
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ইকবাল হাসান জাগো নিউজকে জানান, এটি ফাইলেরিয়ার কম্লিকেশন এলিফেন্থিয়াসিস (গোদ রোগ) অথবা টিউমার জাতীয় গ্রোথ হতে পারে। মেয়েটিকে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল অথবা পিজি হাসপাতালে পাঠানে যেতে পারে।
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কমর্কর্তা মাহমুদুল হক জাগো নিউজকে জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে মেয়েটি প্রতিবন্ধী হয়ে থাকলে অবশ্যই ভাতা পাবে।
শিশু বাবলী আক্তারকে সাহায্য করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন- ০১৭৯৯৫৮৯২১৪ এই নম্বরে।
রিপন দে/আরএআর/পিআর