‘খাবার চাই না মাথা গোঁজার ঠাঁই চাই’
চাউল, ডাল, তেল নয়। আশ্রয় সন্ধান ও পুনর্বাসনের দাবি ভাঙন কবলিতদের। অব্যাহত পদ্মার ভাঙনে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা নদী গর্ভে বিলিন হচ্ছে। নড়িয়া এলাকার বাঁশতলায় এক সপ্তাহ বিরতির পর নতুন করে ভাঙনের কবলে পড়েছে।
বুধবার দুপুর থেকে ২শ বশতঘর সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ৪০টি পাকা ঘর কয়েক হাজার গাছপালা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভাঙন কবলিতরা। পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা নেই। খোলা আকাশের নিচে খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু রাত কাটাতে হচ্ছে তাদের।
জানা যায়, গত এক সপ্তাহ সরকারি-বেসরকারি ভবন মূলফৎগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বহু লোকের ঘরবাড়ি ভেঙেছে। সোমবার রাতে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনটির অধিকাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হাসপাতাল ক্যাম্পাসের একটি আবাসিক ভবনে জরুরি বিভাগ ও বহিঃ বিভাগ চালু রাখা হলেও হাসপাতালে ঢুকার রাস্তাটি বিলিন হয়ে যাওয়ায় ভয়ে কোনো রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে না। হাসপাতালের আরও ১১টি ভবন ঝুঁকিতে রয়েছে। ফাটল দেখা দিয়েছে আরও একটি ভবন।
হাসপাতালের সামনে দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বালু ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলার কাজ অব্যাহত রেখেছে। ভাঙন কবলিত ক্ষতিগ্রস্তরা বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছে। বাজারগুলোর পাকা দোকানগুলো নিজেদের উদ্যোগে ভেঙে ইট ও রড সরিয়ে নিচ্ছে। তবে ভাঙন কবলিতদের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি। আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে বেড়াচ্ছে ভাঙন কবলিত হাজার হাজার মানুষ। অনেকেই না খেয়ে পায়ের নিচে মাটি খুঁজে বেড়াচ্ছে। খোলা আকাশের নিচে বাস করছে অনেক পরিবার।
ভাঙন কবলিতদের অভিযোগ, শুনেছি মন্ত্রী এমপিরা এসেছে। এসে আমাদের কোনো খোঁজ খবর নিল না। আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে গেলন না। এরা ভোটের সময় আসে তারপর তাদের দেখা যায় না। আমরা খাবার চাই না আমরা মাথা গোজানোর ঠাঁই চাই।
কেদারপুর গ্রামের সুফিয়া বেগম জানান, ২০ শতক জায়গার ওপর বড় বাড়ি ছিল। মূলফতগঞ্জ বাজারে দোকান ছিল স্বামী সোহেল মিয়ার। সবই কেড়ে নিয়েছে পদ্মা। দুই মাসের ব্যবধানে ভালো অবস্থান থেকে আজ আমরা ঠিকানাহীন হয়ে পড়েছি।
নড়িয়া বাঁশতলা এলাকার মায়া বেগম বলেন, সর্বনাশা পদ্মা আমাদের সবাইকে এখন এক কাতারে দাঁড় করিয়েছে। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, রাস্তা সবই চলে গেছে পদ্মায়। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের থাকারও জায়গা নেই।
কলেজ শিক্ষার্থী সোভন আহমেদসহ অনেকেই বলেন, বাংলাদেশের মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা। আমরা মৌলিক চাহিদার চারটি থেকে বঞ্চিত। শুধু রয়েছে বস্ত্র। এমনভাবে নদী ভাঙতে থাকলে সব হারাতে হবে। আমরা শুধু খাবার চাই না আমরা মাথা গোজানোর ঠাঁই চাই। চাই দ্রুত বেড়ি বাঁধ।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, নদীর পানি না কমা পর্যন্ত তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব না। এ মুহূর্তে ভাঙন রোধ সম্ভব না হলেও বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে তীব্রতা কমানোর চেষ্টা চলছে। পানি কমলেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
জেলা প্রশাসন কাজী আবু তাহের বলেন, ইতোমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র ভাঙন কবলিতদের আশ্রয়ের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। ভাঙন কবলিত সব ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল ও শুকনা খাবার দেয়া হয়েছে। আর পুর্নবাসন সহায়তা হিসেবে টিন ও নগদ টাকা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
আরএ/আরআইপি