জেবা ও আরজিনার গল্প
একজন নুরে জান্নাত জেবা, অন্যজন আরজিনা। দু`বেলা দু `মুঠো খাবার জোটেনি যাদের। অভাব যাদের নিত্যসঙ্গী। তবুও থেমে থাকেনি ওরা। অভাব নামক দানবের কাছে ওরা হার মানেনি। চরম দারিদ্র্য, বৈরী পরিবেশ এবং বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ওরা দুজন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ভালো ফলাফল করেছে ঠিকই কিন্তু উচ্চ শিক্ষা শেষ করতে পারবে কিনা এ নিয়ে শঙ্কিত তারা।
নুরে জান্নাত জেবা:
নিজেদের থাকার জায়গা কিংম্বা পড়ার ঘরের চেয়ার টেবিল না থাকলেও কুষ্টিয়ার নুরে জান্নাত জেবা এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। আর্থিক অনটন ও দরিদ্রতাকে জয় করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।
জেবার মা মমতাজ বেগম জানান, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের পিছনের একটি কোয়ার্টারে ভাড়া থাকেন তারা। বাবা জালাল উদ্দিন একটি নার্সিং ইনস্টিটিউটের দারোয়ান। স্থায়ী সম্পদ বলে কিছু নেই। খুব ছোট্র একটা ঘর। চেয়ার টেবিল রাখার জায়গা নেই, তাই খাটে বসে দেয়ালে কাগজ লাগিয়ে পড়াশুনা চালাতে হতো জেবাকে।
পরিবারের সদস্যরা জানালেন, টাকার অভাবে পরীক্ষার আগে টেস্ট পেপার কেনা হয়নি জেবার। পরিবার থেকে লেখাপড়ার পেছনে একটি টাকাও ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এসকল প্রতিকূলতাও রুখতে পারেনি তাকে। অদম্য ইচ্ছা শক্তির কারণে নুরে জান্নাত জেবা এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর আগে এসএসসিতেও জিপিএ-৫ এবং ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল সে।
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আহসান কবীর রানা জানান, অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে বলীয়ান হয়ে সকল প্রতিকূলতা জয় করতে পেরেছে জেবা। যে কারণে তার এই ভালো ফলাফল। উচ্চ শিক্ষা লাভের পথে দারিদ্রতা যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তার শিক্ষকরা।
আরজিনা :
কুষ্টিয়ার খোকসার অদম্য মেধাবী আরজিনার দিন পার হয় তাঁতের চরকায় সুতো বুনে। বাবা মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় সংসারের চাকা তার ঘাড়ে এসে পড়েছে। তারপরও লেখাপড়া শেখার অদম্য ইচ্ছা আর কঠোর পরিশ্রমের কারণে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় আরজিনা জিপিএ-৫ পেয়েছে। কিন্তু চরম দারিদ্রতা আজ তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উপজেলার পদ্মা তীর ঘেঁষা অজপাড়া আমলাবাড়িয়ার হতদরিদ্র নূরুল ইসলামের বড় মেয়ে আরজিনা খাতুন। বাবা মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় চরম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তার স্কুল জীবন শুরু হয়। বাবা মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে সে বড়। তাঁতের চরকায় সুতা ভরে দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে। যা আয় হয় তা দিয়ে একবেলা খেয়ে না খেয়ে প্রতিটি শেণিতেই সে প্রথম হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি, এসএসসিতে ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।
মেয়ের সাফল্যে খুশি মা নাসিমা খাতুন। তিনি জানান, তাঁতের চরকায় সুতা তুলে, প্রাইভেট পড়িয়ে বাবার সংসার চালাতো মেয়ে আরজিনা। তবে দারিদ্রতার কারণে শেষ পর্যন্ত উচ্চ শিক্ষা চালিয়ে নিতে পারবে কিনা এ নিয়ে খুবই চিন্তিত মা নাসিমা খাতুন। একদিকে সংসারে চরম অভাব অন্যদিকে মেয়ের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ কিভাবে সম্ভব হবে এ হতাশা নিয়েই দিন কাটছে তার।
আরজিনা জানান, সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে চলে গেলে অসুস্থ বাবা, মা আর ছোট ভাই-বোনদের কে দেখবে? আর তার পড়ার খরচই বা আসবে কোথা থেকে?
ধোকড়াকোল কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন মনি বলেন, ছাত্রীটির উচ্চ শিক্ষার জন্য আমরা সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।
আল-মামুন সাগর/এসএস/আরআইপি