ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আমের বাগানে মাল্টা চাষ

জেলা প্রতিনিধি | নওগাঁ | প্রকাশিত: ০১:১৯ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মাল্টা বিদেশি ফল তবে বাংলাদেশে এর চাহিদা অনেক। শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু মাল্টা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। আর তাই ঠাঁঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চল বলে খ্যাত নওগাঁর কৃষকরা মাল্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। উত্তরাঞ্চল জেলার পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর, পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলা। এসব এলাকায় পানির সমস্যার কারণে ধানের আবাদ কমছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে গত দুই বছরে জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় একশ বিঘা জমিতে মাল্টার বাগান গড়ে উঠেছে। তবে মাল্টা চাষে লাভবান হলে আগামীতে অপার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Naogaon-Malta-Fruits-4

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, বরেন্দ্র অঞ্চলগুলোতে পানির স্তর নিচে হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে ধানের আবাদ ছাড়া তেমন কোনো ফসল হয় না। বছরের অধিকাংশ সময় পতিত থাকা জমিতে কৃষকরা গড়ে তোলেন আম বাগান। আম চাষে অনেক সময় লোকসান হওয়ায় আমের পরিবর্তে অন্যান্যে ফসল চাষের চিন্তা শুরু করেন কৃষকরা। অন্যান্য ফসলের চেয়ে কম চাহিদা সম্পন্ন মালটা চাষে বিপ্লব ঘটানো ও বিদেশ থেকে আমদানির চাপ কমাতে হর্টিকালচারে ২০১৫ সাল থেকে বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ শুরু হয়েছে। ইত্যেমধ্যে প্রায় তিন হাজার চারা বিক্রি করা হয়েছে। হর্টিকালচারে সহযোগিতায় জেলায় গত তিন বছরে একশটি মাল্টার প্রদর্শণীয় প্লট তৈরি করা হয়েছে।

পোরশা উপজেলার ছাউল গ্রামের আবু বক্কর মন্ডল বলেন, দুই বছর আগে মাল্টা চাষে করতে প্রথমে মাটি খনন করে বিভিন্ন সার মিশ্রণ করে এক মাস রেখে দেয়ার পর ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাতশটি চারা এনে বাগানে লাগান। এর মধ্যে ভিয়েতনাম দেশের পাঁচশ আর বাকি দুইশটি বারি-১ জাতের মাল্টা চারা লাগাই। প্রায় চারশটি মাল্টা গাছে মাল্টা ধরেছে। বারি-১ জাতের চেয়ে ভিয়েতনাম দেশের মাল্টার ফল তুলনামূলক বড় এবং মিষ্টি। মাল্টা চাষে লাভজনক হলে আগামীতে আরও বেশি পরিমাণ জমিতে মাল্টা রোপন করবেন বলে জানান।

Naogaon-Malta-Fruits-4

উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের ওবাইদুল্লাহ শাহ বলেন, আম বাগানের পাশাপাশি বারি-১ জাতের ছয়শটি মাল্টা গাছ লাগান। এর মধ্যে দুইশটি গাছে প্রায় প্রতিটিতে ৩০ থেকে ৭০টি করে মাল্টা ধরেছে। মিষ্টি স্বাদের এসব মাল্টা ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি।

সাপাহার সদর উপজেলার মাল্টাচাষী সোহেল রানা বলেন, বাড়ি সাপাহার হলেও পত্নীতলা উপজেলার রূপগ্রামে বিভিন্ন ফলের বাগান গড়ে তুলেছি। দুই বছর আগে বদলগাছী হর্টিকালচার থেকে ২০টি মাল্টার চারা নিই। এরপর সিলেট থেকে আরও ৬০টি মাল্টার চারা নিয়ে এসে লাগিয়েছি।

Naogaon-Malta-Fruits-4

পোরশা উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, বরেন্দ্রভূমির এসব জমিতে বর্ষাকালে শুধু আমন ধান চাষ করা হতো। আমন ধানের চেয়ে আম চাষে লাভবান হওয়ায় কৃষকরা আম চাষে ঝুঁকেছেন। আম চাষের চেয়ে মাল্টা চাষে ঝুঁকি কম এবং কম সেচ লাগে। তাই কৃষি বিভাগ থেকে দেড় বছর আগে উপজেলায় কৃষদের মাঝে মাল্টার ২০টি প্রদশনীয় প্লট তৈরি করা হয়। ওই প্রদর্শনীয় প্লট দেখে এলাকার অনেক কৃষক মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। গত দেড় বছরে উপজেলায় ৫০ বিঘা জমিতে মাল্টার বাগান গড়ে উঠেছে।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলগুলোর অধিকাংশ জমিতে আমন ধান ছাড়া অন্য কোনো ফসল উৎপাদন হয় না। এ কারণে আম বাগান গড়ে তোলা হচ্ছে। আমের পাশাপাশি কম পানি চাহিদা সম্পন্ন মাল্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছে কৃষকরা। বর্তমানে জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে বিশেষ করে পোরশা, সাপাহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে। ইত্যেমধ্যে জেলায় একশ বিঘারও ওপর জমিতে মাল্টা চাষ করা হয়েছে।

আব্বাস আলী/আরএ/পিআর

আরও পড়ুন