বড়পুকুরিয়ায় কয়লা উত্তোলন শুরু
টানা ৮৬ দিন বন্ধ থাকার পর শনিবার থেকে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে পরীক্ষামূলকভাবে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়েছে। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর (সোমবার) থেকে পুরোপুরি উৎপাদন শুরু হবে। নির্ধারিত সময়ের দু’দিন আগেই কয়লা উত্তোলন শুরু হলো।
বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ফজলুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, খনির ১৩১৪ নম্বর ফেসের টানেল নির্মাণকাজ শেষে নতুন এই ফেসে কয়লা কাটিং মেশিনসহ আনুষঙ্গিক মেশিনপত্র স্থাপন করা হয়েছে। ১০ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দু’দিন আগেই পরীক্ষামূলক কয়লা উত্তোলন শুরু হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে খনির চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়াম, খনি কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশি খনি শ্রমিকরা ১০ সেপ্টেম্বর থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ১৩১৪ নম্বর ফেস থেকে পুরোপুরি কয়লা উত্তোলন শুরু করবে ।
এর আগে গত ১৫ জুন খনির উৎপাদনশীল ১২১০ নম্বর কোল ফেসের উৎপাদনযোগ্য কয়লার মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় ১৬ জুন থেকে খনির কয়লা উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
উৎপাদন শুরু না হওয়া পর্যন্ত মজুত কয়লা দিয়ে কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে চলার কথা ছিল। কিন্তু ১ মাস ৫ দিনের মাথায় এসে ১৯ জুলাই খনির ইয়ার্ড থেকে ২৩০ কোটি টাকার প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার টন কয়লা উধাও হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। ২২ জুলাই কয়লার মজুত শূন্যের কোটায় নেমে আসে। এতে কয়লার অভাবে ২২ জুলাই থেকে বড়পুকুরিয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলায় শুরু হয় বিদ্যুতের ভয়াবহ লো-ভোল্টেজ ও লোডশেডিং।
গত ২৬ আগস্ট খনির প্রশাসনিক ভবনে পিডিবি, চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়াম ও বিসিএমসিএল’র মধ্যে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে ১০ সেপ্টেম্বর বড়পুকুরিয়ায় কয়লা উত্তোলন শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। তবে কবে থেকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হবে সে সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, আগামী (অক্টোবর) মাসের প্রথম সপ্তাহেই বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।
উল্লেখ্য, কয়লার অভাবে বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার তিনদিন আগে ১৯ জুলাই খনির ইয়ার্ড থেকে ২৩০ কোটি টাকার প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার টন কয়লা উধাও হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। এ ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কয়লা কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমদদ, মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
খনির কোম্পানি সচিব ও মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড সিরাজগঞ্জে বদলি করা হয়। খনির এই চার কর্মকর্তাসহ ১৯ কর্মকর্তার নামে দুর্নীতি দমন আইনে ২৪ জুলাই পার্বতীপুর মডেল থানায় একটি মামলা করে বিসিএমসিএল’র ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনিছুর রহমান।
মামলাটি তদন্ত করছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ঢাকার উপ-পরিচালক শামসুল আলম। দুদক খনির সাবেক দুই ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুজ্জামান ও আমিনুজ্জামান এবং মামলায় অভিযুক্ত ১৯ কর্মকর্তাসহ ২১ কর্মকর্তার দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
এমদাদুল হক মিলন/আরএআর/আরআইপি