টাকা দিলেই মেডিকেল সার্টিফিকেট!
টাকা দিলেই পাওয়া যায় ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট। এমনকি যার নামে মেডিকেল সার্টিফিকেট দেয়া হচ্ছে তাকে দেখারও প্রয়োজন হয় না। এই ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়েই দাখিল হয় আদালতে মামলা। আর এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকেন ডাক্তার, ক্লিনিক মালিক এমনকি আইনজীবীও।
সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকায় অবস্থিত মনজু মেমোরিয়াল নার্সিং হোম। যার পরিচালক সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) সিভিল সার্জন ডা. বিপিন বিহারী সরকার। পাশেই শিমুল মেমোরিয়াল ক্লিনিক। সেখানকার পরিচালক সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সাবেক ওয়ার্ড বয় বর্তমানে ‘বিশিষ্ট ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত শহিদুল ইসলাম।
আর এ শিমুল মেমোরিয়াল ক্লিনিকেই টাকা দিলে মেলে ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট। প্রশাসনের সামনেই এমন বেআইনি ঘটনা ঘটলেই নেই কোনো তদারকী। যার কারণে বেপোরোয়া হয়ে উঠছেন ক্লিনিক মালিকরাও।
অভিযোগ রয়েছে, সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাড. জহুরুল হক বাবু তিনিও জড়িত ভূয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট নেয়ার নেপথ্যে।
গত ১১ জুলাই মনজু মেমোরিয়াল নার্সিং হোমের পরিচালক ডা. বিপীন বিহারী সরকার সাতক্ষীরা শহরের উত্তর কাটিয়া এলাকার কাজী ফসিউদ্দীন স্বপনের মেয়ে আনিফা আনজুরার নামে একটি ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট দিয়েছেন। এই মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে সাতক্ষীরা নারী ও শিশু আদালতে একটি মিথ্যা মামলাও দাখিল করা হয়েছে।
সে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, মারপিটের পর তাকে সাক্ষীরা উদ্ধার করে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করে। সেখানে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়।
অথচ ক্লিনিকের কাগজপত্রে বা কোথাও মেয়েটিকে ভর্তির কোনো প্রমাণাদি নেই। এমনিতেই তাকে ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে মনজু মেমোরিয়াল নার্সিং হোমের পরিচালক ডা. বিপীন বিহারী সরকার বলেন, ‘আমি মেয়েটিকে দেখিনি বা মেয়েটিও আমার কাছে আসেনি। সার্টিফিকেট নেয়ার জন্য মেয়েটির নানা শহরের আমতলা এলাকার আব্দুল জব্বার এসেছিলেন। তাছাড়া সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাড. জহুরুল হায়দার বাবু বলেছিলেন বলে সার্টিফিকেট দিয়েছিলাম। তবে সেখানে মারপিটের তেমন কিছু উল্লেখ করা হয়নি।’
কাউকে না দেখেই বা একজনের কথা শুনে কিভাবে সার্টিফিকেট দিলেন এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। তবে বলেন, শিমুল ক্লিনিকের পরিচালক শহিদুল ইসলামও আমাকে বলেছিলো এ জন্য দিয়েছি।
এদিকে শিমুল ক্লিনিকের পরিচালক সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সাবেক ওয়ার্ড বয় শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সাতক্ষীরার শ্যামনগর আসনের এমপি জগলুল হায়দারের ভাই শ্যামনগরের ইউপি চেয়ারম্যান ও সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাড. জহুরুল হায়দার বাবু বলার পর আমি ডাক্তারকে মেডিকেল সার্টিফিকেটটি দেয়ার কথা বলেছিলাম। তাছাড়া মেয়েটির নানা আব্দুল জব্বার সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসে আগে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে তিনিও সার্টিফিকেটটি দেয়ার কথা বলেছিলেন। মেয়েটিকে আমরা দেখিনি। সার্টিফিকেটটি নেয়ার জন্য মেয়েটির নানা আব্দুল জব্বার ৫শ টাকাও দিয়েছিলেন।’
তবে আমতলা এলাকার জেডএস ফার্মেসির মালিক ও সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের সাবেক কর্মচারী আব্দুল জব্বার এ সার্টিফিকেট নেয়ার কথাই অস্বীকার করেন।
অন্যদিকে ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে সাতক্ষীরা নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি ও শ্যামনগর সদর ইউপির চেয়ারম্যান জহুরুল হায়দার বাবু বলেন, আমি ডাক্তারকে এমন কোনো ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট দিতে বলিনি। আর যদি ডাক্তার এমন ভুয়া সার্টিফিকেট দেয় তার দায়ভার একান্ত তার নিজের। এমন ভুয়া মামলা আদালতেও টিকে থাকে না।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহরের হার্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক খালিদুর রহমান বলেন, ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেটে যেহেতু আদালতে অলরেডি মামলা হয়েছে সেহেতু এ বিষয়ে ডাক্তার আদালতে তার স্বপক্ষের যুক্তি দেখাবেন। তবে ব্যক্তিগতভাবে তাকে বলবো তিনি এসব কেন করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাতক্ষীরা শহরের এক ক্লিনিক মালিক বলেন, এমন অবস্থা নতুন নয়। প্রতিনিয়তই এমন ঘটনা ঘটছে। কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় এমন ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ঘটনার বিষয়ে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. তাওহিদুর রহমান বলেন, ওই চিকিৎসক যে কাজটি করেছেন তা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাছাড়া কাউকে না দেখেই তিনি কিভাবে মেডিকেল সার্টিফিকেট দিলেন আর সেটা নিয়ে আদালতে মামলা হলো, আসামি পক্ষ তার বিরুদ্ধে মামলা করলে তিনি তার শাস্তি পাবেন।
আকরামুল ইসলাম/এফএ/পিআর