হাসপাতালের বিল দেখে সন্তান ফেলে পালালেন বাবা-মা
নির্ধারিত সময়ের আগেই জন্ম নেয়া অপেক্ষাকৃত কম ওজনের সন্তানকে বাঁচাতে কুমিল্লায় নিয়ে আসেন চাঁদপুরের শাহ আলম ও রোকেয়া দম্পতি। কয়েকটি প্রাইভেট হাসপাতাল ঘুরে পরে নবজাতককে ভর্তি করেন নগরীর ঝাউতলার সিভিক স্কয়ারের কুমিল্লা মা ও শিশু স্পেশালাইজড হসপিটালে। এ ঘটনা গত ১৮ আগস্টের।
কিন্তু ঘটনা এখন ভিন্ন। যেখানে নবজাতককে সুস্থ করে বাড়ি ফেরানোই ছিল সবকিছু সেখানে হাসপাতালের বিলের ফিরিস্তি দেখে সন্তান ফেলে পালিয়ে যেন রক্ষা পেয়েছেন দারিদ্র্যপীড়িত বাবা-মা।
বিষয়টি এখন গড়িয়েছে পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন পর্যন্ত। হাসপাতালের এনআইসিইউ বিল তো দূরের কথা এখন নবজাতক নিয়ে বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ আগস্ট নির্ধারিত সময়ের আগেই ৭০০ গ্রাম ওজনের ছেলে নবজাতক নিয়ে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা গ্রামের শাহ আলম ও তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলার ‘কুমিল্লা মা ও শিশু স্পেশালাইজড’ হাসপাতালে আসেন। ডাক্তাররা তাৎক্ষণিক ওই শিশুর জীবন বাঁচাতে তাকে ওই হাসপাতালের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (এনআইসিইউ) রাখার ব্যবস্থা করেন। এর আগেও ওই দম্পতির ৩টি বাচ্চা জন্মের পর মারা যায় বলে ডাক্তাররা জানান।
হাসপাতালের কর্মকর্তা ও ডাক্তাররা জানান, নবজাতকের চিকিৎসায় ইতিবাচকভাবে সবকিছু চলছিল, চিকিৎসায় বেশ আরোগ্যও হয় শিশুটির। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় বিল নিয়ে। ৬ষ্ঠ দিনে নবজাতকের চিকিৎসার বিলের পরিমাণ ওই দম্পতিকে জানানো হয়। টাকার অঙ্কে ৬ দিনে দুই লাখ টাকা বিল হয়েছে।
ওই বিল দেখেই চোখ ছানা-বড়া দম্পতির। তাই সবার অজান্তে প্রিয় সন্তানকে হাসপাতালের এসআইসিইউতে রেখেই গত ২৪ আগস্ট হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান দম্পতি। দিনভর বাবা-মায়ের সন্ধান না পেয়ে ওই শিশুর বিষয়ে কোতয়ালি মডেল থানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাধারণ ডায়রি করে।
পরে বিষয়টি গড়ায় স্থানীয় প্রশাসনসহ স্বাস্থ্য বিভাগে। রোববার পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারলেও মানবিক কারণে ভালোভাবেই নবজাতকের চিকিৎসা চলছে বলে দাবি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু সালাম মিয়া জানান, হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে যে ঠিকানা আছে সেটা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। ওই ঠিকানায় তাদের না পেলে সরকারি চাইল্ড হোম কিংবা আদালতের অনুমতি নিয়ে শিশুটিকে কাউকে দত্তক দেয়া হবে।
হাসপাতালের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর বদিউল আলম বলেন, যখন ওই নবজাতককে এখানে আনা হয় তখন ওর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন ছিল। এসব চিকিৎসার ব্যয় অনেক। চিকিৎসায় ১৮ তারিখ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ টাকা বিল হয়েছে। কিন্তু নবজাতকের মা-বাবার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের ফোনটিও বন্ধ রয়েছে। তাই আমরা কোতয়ালি থানায় জিডি করেছি। এছাড়া নবজাতকটি এখনও এনআইসিইউতেই রয়েছে। আমরা টাকার থেকে ওকে বাঁচিয়ে রাখার বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, হাসপাতাল থেকে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে। থানায় জিডি করা হয়েছে। আমরা আরও অপেক্ষা করব। এখনও চিকিৎসা চলছে। নবজাতকের মা-বাবা না এলে আদালতের নির্দেশে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কামাল উদ্দিন/এফএ/জেআইএম