কলেজছাত্রীকে ছুরিকাঘাত করা বখাটে অভির আত্মসমর্পণ
প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কলেজছাত্রীকে ছুরিকাঘাত করা বগুড়া শহর যুবলীগ সভাপতির ছেলে কাওসার অভি (২২) আত্মসমর্পণ করেছে। টানা তিনদিন পালিয়ে থাকার পর রোববার রাতে স্বেচ্ছায় ধরা দেয় অভি।
অভির মা ইয়াসমিন আলম জানান, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অভিকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। ছেলের অপরাধের শাস্তি হওয়া দরকার।
বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূইয়া বলেন, বখাটে অভি এখন পুলিশ হেফাজতে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এর আগে শনিবার অভিকে ধরতে রাতভর অভিযান চালায় পুলিশ।
বগুড়া শহরতলির পালশা বিদ্যুৎনগর এলাকার জাহিদুর রহমানের মেয়ে বগুড়া সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষে পড়ে। লেখাপড়ার পাশাপাশি শহরের বাদুড়তলায় রূপছাড়া বিউটি পার্লারে বিউটিশিয়ানের কাজ শেখে। বাড়ি থেকে কলেজে যাতায়াতের পথে অভি তাকে উত্ত্যক্ত করত। প্রেমের প্রস্তাব দিতো অভি। এতে সাড়া না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয় অভি।
গত ৩০ আগস্ট বৃহস্পতিবার বিকালে অভি ও তার তিন সঙ্গী বাদুড়তলায় ওই বিউটি পার্লারে যায়। সেখান থেকে তাকে তুলে কাটনারপাড়ার একটি বাড়িতে নেয়া হয়। সেখানে আবারও প্রেম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে অভি ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ছাত্রীকে মারধর এবং ছুরিকাঘাত করে। এরপর হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে নামাজগড় এলাকার ক্লিনিকে এবং পরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
শনিবার বিকালে ছাত্রীর বাবা জাহিদুর রহমান সদর থানায় অভি ও তার তিন সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।
জানা গেছে, কাওসার অভি বেপরোয়া জীবন যাপন করত। শহরের কাটনারপাড়া এলাকায় যে বাসায় অভিদের বসবাস তার আশেপাশেসহ বগুড়া মহিলা কলেজ, নতুন শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন, তাপসি রাবেয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, সরকারি আজিজুল হক কলেজের পুরাতন ভবন, জয়পুরপাড়া মাটিডালি বিমান মোড়, এসওএস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নিশিন্দারা ফকির উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও উপশহর এলাকায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এক ডজন মোটর সাইকেল বহর নিয়ে বেপরোয়া চলাচল ছিল অভির। বিশেষ করে স্কুল ও কলেজের শুরু ও ছুটির সময় ছাত্রীরা অভির ভয়ে আতঙ্কে থাকত।
শহরের বিলাশবহুল শপিংমলে কেনাকাটা করতে আসা সুন্দরী তরুণীদের অশালীন অচরণের মাধ্যমে বিকৃত আনন্দ বোধ করত সে। জলেশ্বরীতলা এলাকার একাধিক শপিংমলের সেলসম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য জানান।
তারা জানান, কেউ অশালীন আচরণের প্রতিবাদ করলে সেগারেটের ধোঁয়া মুখে নিয়ে প্রকাশ্যে প্রতিবাদকারী তরুণীর শরীরের ছুঁড়ে দেয়া হতো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভি বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সামনে মদ পান করত। বাসার ফ্রিজেই সাজানো থাকতো হরেক ব্রান্ডের বিয়ারের ক্যান। শহরে কখনো সংঘবদ্ধ প্রতিবাদের মুখে পড়লে প্রভাবশালী রাজনৈতিক বাবা মাহফুজুল আলম জয় ও বড় চাচা আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল আলম মোহনের নাম ভাঙ্গিয়ে পার পেত।
শহরের আলোচিত এ মামলার তদন্ত করছেন বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর শেখ ফরিদ উদ্দিন। তিনি জানান, নির্যাতিতার পরিবার এখনও ভয়ে আছে। যার কারণে তারা কথা বলতে চাইছেন না। পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।
লিমন বাসার/এএইচ/এসআর