পানি বাড়লেই তলিয়ে যাবে ৫০০ একর ধানক্ষেত
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের ভাঙ্গামোড় গ্রামে বন্যায় ভেঙে যাওয়া যমুনা নদীর প্রায় ৪০ মিটার একটি বাঁধ পুনর্নির্মাণ না করায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে ৫০০ একরেরও বেশি জমির ধানক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাঁধের ভাঙা ওই অংশের সঙ্গে যুক্ত একটি খাল দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে ধান গাছ নষ্ট হলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ভাঙ্গামোড় ও কাতলামারী গ্রামের সহস্রাধিক কৃষক। অথচ গত মার্চ মাসে ইউএনও এই বাঁধটি দ্বিতীয় পর্যায়ের কর্মসৃজন প্রকল্পের দ্বারা পুনর্নির্মাণ করে দেয়ার কথা বললেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০ বছরেরও বেশি সময় আগে ভাঙ্গামোড়, সানকিভাঙ্গা ও ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারী এলাকায় ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ডানতীর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে এক কিলোমিটার পশ্চিম দিয়ে আরেকটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ফলে অনেকটা এলাকা উন্মুক্ত থাকলে প্রতিবছর নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হতো।
পরে কয়েক বছর আগে কাতলামারী গ্রাম থেকে দক্ষিণ দিকে সানকিভাঙ্গা গ্রাম পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বাঁধ তৈরি করে দেয় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। কিন্তু গত বছরের আগস্ট মাসে এই বাঁধটির ভাঙ্গামোড় গ্রামে প্রায় ৪০ মিটার অংশ ভেঙে গেলে সেটি আর পুনর্নির্মাণ করা হয়নি। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই বাঁধটি নির্মাণ না করায় উপরমহলের নির্দেশ ছাড়া তারা সেই বাঁধ পুনর্নির্মাণ করতে পারবে না বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ধানের চারা লাগানোর জন্য জমির মালিক ও কৃষকরা নদীর সঙ্গে যুক্ত খালটির ধারের জমির আগাছা পরিষ্কার করছেন। কাতলামারী ও ভাঙ্গামোড় গ্রামের প্রায় ৯৮ শতাংশ জমিতে আমন ধানের চারা লাগানো হয়েছে। বাঁধের ভাঙা ওই অংশের পানিতে মাছ ধরছেন কয়েকজন। বর্তমানে নদীর সঙ্গে যুক্ত এই খালটি ভাঙ্গামোড় থেকে কাতলামারী গ্রাম ও কুকড়ারহাট বাজার পর্যন্ত গেছে।
ভাঙ্গামোড় গ্রামের রংমিস্ত্রী সজিব মিয়া (৩৩) বলেন, প্রায় চার হাজার টাকা খরচ করে আমার ৩০ শতাংশ জমিতে আমন ধানের চারা লাগিয়েছি। বাঁধের ভাঙা ওই অংশ মেরামত না করায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই নিচু ধানের জমিগুলো তলিয়ে যাবে। ফলে ফসলের ক্ষতি হলে আর্থিকভাবে লোকসানের মুখে পড়বেন কৃষকরা। এজন্য আপাতত যেভাবেই হোক বাঁধের ভাঙা ওই অংশে কোনো কিছু দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে।
ভাঙ্গামোড় গ্রামের ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা জাগো নিউজকে বলেন, ভাঙা বাঁধের ওই অংশ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করলে ৫০০ একরেরও বেশি জমির ধানসহ অন্যান্য ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু সেই বাঁধটি এখনও পুনর্নির্মাণ করা হলো না। বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। তারপরও ভাঙা বাঁধ পুনর্নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অথচ এই বাঁধটি মেরামত করা খুব জরুরি।
ভরতখালীর ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) বজলুর রহমান মুক্তা জাগো নিউজকে বলেন, নদীতে পানি কম এজন্য ধানক্ষেত এখনও নষ্ট হয়নি। তবে নদীতে পানি বাড়লে ওই ভাঙা বাঁধটি দিয়ে পানি প্রবেশ করে জমির ধান অবশ্যই নষ্ট হবে। সম্প্রতি শুনেছি ভাঙা বাঁধটি পুনর্নির্মাণ করে দেয়ার কথা। সেটি যখন এখনও হয়নি তাহলে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেব।
সাঘাটা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মিঠুন কুন্ডু মুঠোফোনে জাগো নিউজকে বলেন, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির তালিকা অনুযায়ী যেসব বরাদ্দ পাওয়া গেছে সেগুলোর মধ্যে কিছু মেরামত করা হয়েছে আবার কিছুর কাজও চলছে। কিন্তু এই বাঁধটি পুনর্নির্মাণের বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তাই সেটি পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে কাজটা করে দেয়া হবে।
গত মার্চ মাসে ভাঙা বাঁধটি পুনর্নির্মাণ করে দেয়ার কথা ছিল মনে করে দিলে সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল কুমার ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, আপনি সেই সময় বলেননি তো। আমাদের কি সব সময় মনে থাকে। মার্চ মাস সেই কবেই চলে গেছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করলে তো সেই সময় করা যেত। আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে হলে ওটা করে দেয়া যাবে।
এই মুহূর্তে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে ব্যবস্থা নেয়ার মতো কোনো সুযোগ নেই। ওটা বড় প্রজেক্ট। নদীতে পানি হলে জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাবে মনে করে দিলে ইউএনও বলেন, এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা তো হয়ই। এটা আমাদের কাজ না তো, আমি তো সেটা আপনাকে সেদিনও বলেছিলাম। আমি যেটা করছি কোঅর্ডিয়ালিটির কারণে করতিছি। আসুক, পরের বার দেখবো বিষয়টা।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি ‘গাইবান্ধায় ভাঙা বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেই’ শিরোনামে জাগো নিউজে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই ভাঙা বাঁধের পশ্চিম পাশে বন্যায় একই সঙ্গে ভেঙে যাওয়া স্লুইসগেট সংলগ্ন একটি রাস্তা ভেঙে গেলে সেটি দুই মাস আগে মেরামত করে দেয়া হয়। এ সংক্রান্ত ‘বন্যায় ভাঙা রাস্তা মেরামতের উদ্যোগ নেই’ শিরোনামেও চলতি বছরের ৪ মার্চ জাগো নিউজে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
এমএএস/পিআর