আমি মনে হয় আর বাঁচবো না
১৪ বছর বয়স পর্যন্ত অন্য সবার মতো সুস্থ ও স্বাভাবিকই ছিল মো. সজিব চৌকিদার। এই সময়ের মধ্যে প্রতিদিন সকালে বাড়ির পাশে মাদরাসায় পড়তে যাওয়া, মাদরাসা থেকে এসে ভর-দুপুরে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যাওয়া প্রতিদিনের রুটিন ছিল তার।
মা অন্যের বাড়িতে কাজ না করলে মুখে খাবারই উঠে না সজিবের, কিন্তু সেটা তাকে দেখে সহজে কেউ বুঝতে পারতো না। শত কষ্টের মাঝেও তার ফূর্তি ও দুরন্তপনা লেগেই থাকতো। হঠাৎ করেই ২০১৬ সালের কোনো এক সন্ধ্যায় জ্বরে কাবু হয়ে পড়ে দূরন্ত সেই ছেলেটি। জ্বর থেকেই শুরু হয় টাইফয়েড। স্থানীয় বাজার থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ানোর পর জ্বর কমলেও স্বল্প আয়ের কারণে সন্তানকে উন্নত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত নিতে পারেনি মা শেফালি বেগম। জ্বর সেরে যাওয়ার কিছুদিন পরই আস্তে আস্তে সজিবের মেরুদণ্ড বাঁকা হতে থাকে। বর্তমানে তার পিঠের ডান পাশে টিউমারের আকৃতি ধারণ করেছে।
সজিবের বয়স এখন ১৬ বছর। গত দুই বছর ধরে পিঠের উপর বিশালাকৃতির টিউমার নিয়ে যন্ত্রণার জীবন কাটাতে হচ্ছে তাকে। ইচ্ছে করলেও কখনও চিত হয়ে ঘুমাতে পারছে না সজিব। ছুটতে পারছে না বন্ধুদের সঙ্গে।
পটুয়াখালী শহরের মুসলিম গোরস্থান এলাকায় সজিব ও রাকিবকে নিয়ে থাকেন তাদের মা শেফালি আক্তার।
সজিবের মা শেফালি বেগম জাগো নিউজকে জানান, দুই ছেলের মধ্যে রাকিব বড়, সজিব ছোট। সজিবের জন্মের কিছুদিন পরই তার স্বামী তাকে তালাক দিয়ে আরেকজনকে বিয়ে করে। এরপর থেকে কোনো খোঁজখবর নেন না তিনি। তখন থেকেই সন্তানদের কষ্ট করে বড় করছেন তিনি।
তিনি বলেন, যোগালির কাজ করি। মাঝে মধ্যে কাজ পাই, আবার পাই না। যেদিন কপালে কাজ জুটে সেদিন তিনজনের খাবার হয়। কাজ না থাকলে খাবার থাকে না। প্রতিবেশীরা অনেক সাহায্য করেছে আর কত করবে?
সজিবের মা জানায়, এলাকার লোকজন বলেছেন তাকে (সজিব) ঢাকায় নিয়ে গেলে নাকি ভালো হবে। অপারেশন করতে হবে। অনেক টাকা নাকি প্রয়োজন। কিন্তু কোথায় পাবেন তিনি এত টাকা?
সজিব জানায়, আগে আমারও স্বাস্থ্য ভালো ছিল। শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড হাফিজিয়া মাদরাসায় পড়তে যেতাম। এখন আর কিছুই করতে পারি না। বাবা থেকেও নেই। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পরেই পিঠ ব্যথা করে। মাঝে মধ্যে বুকও ব্যথা করে। দরিদ্র্র মা তাকে চিকিৎসা করাতে পারবে না। কান্নাকণ্ঠে সজিব বলেই ফেলল আমি মনে হয় বাঁচবো না।
সজিবের ব্যাপারে কথা হয় প্রতিবেশী পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি উজ্জল সিকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, সজিব হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে ডান পাশে চলে আসায় সে অন্য দশজনের মতো চলাফেরা করতে পারে না। তার চিকিৎসায় সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে ভবিষ্যতে হয়তো সে সুস্থ সুন্দরভাবে চলাফেরা করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল বারেক হাওলাদার জাগো নিউজকে বলেন, তারা খুব অভাবি। আমার সাধ্যমতো তার পরিবারকে সাহায্য করছি। সজিবের চিকিৎসায় সবার এগিয়ে আসা উচিত।
সজিবের বিষয়ে কথা হলে পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. শাহ্ মুজাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমি স্পেশালিস্ট নই। তার জন্য আমাদের দোয়া থাকলো। ও যেন সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
সজিবকে সহযোগিতা বা তার ব্যাপারে আরও জানতে যোগাযোগ করতে পারেন তার ভাই মো. রাকিব চৌকিদারের সঙ্গে। মোবাইল- ০১৭২৬-০৫২৯৬৯।
মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/এমএএস/পিআর