সন্তান জন্ম দিয়ে নতুন বিপদে জর্ডান ফেরত সেই তরুণী
জর্ডানের মিনি পতিতালয় থেকে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে দেশে ফেরা মানিকগঞ্জের সেই তরুণী ফুটফুটে একটি মেয়ে সন্তান প্রসব করেছেন। গত বৃহস্পতিবার সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশুটির জন্ম হয়। কিন্তু মায়ের কোলজুড়ে আসা এই সন্তান সমাজে কার পরিচয়ে বড় হবে? কে দায় নেবে কুমারী মায়ের এই সন্তানের সেই দুশ্চিন্তা ভর করেছে দারিদ্র্যগ্রস্ত পরিবারটিতে।
এরইমধ্যে সমাজ থেকে বিচ্যুত করা হয়েছে তরুণীর পরিবারকে। মাতবররা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এমন পরিবারের ঠাঁই নেই সমাজে। অসহায় পরিবারটির এখন এলাকায় বসবাস করাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ওই তরুণীর বাবা পেশায় রিকশাচালক। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়। তাই মা-বাবার সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে কাশেম আলী নামে স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে ২০১৬ সালে জর্ডানে পাড়ি জমিয়েছিলেন ওই তরুণী।
বাসা বাড়িতে কাজ দেয়ার কথা বলে তাকে পাঠানো হলেও মূলত বিক্রি করা হয় মিনি পতিতালয়ে। সেখানে দিনের পর দিন তাকে সহ্য করতে হয় অমানবিক নির্যাতন।
পরে একই উপজেলার চান্দহর গ্রামের চরচামটা গ্রামের নিহাজ উদ্দিনের মেয়ে জর্ডান প্রবাসী সেনিয়ার আক্তারের সঙ্গে পরিচয় হয় ওই তরুণীর। সাহায্য করার নামে সেনিয়াও তাকে নিজের বাসায় আটকে রেখে যৌনকাজে বাধ্য করেন।
সেনিয়ার বাসায় তার মতো আরো ২০ জন নারীকে দিয়ে একই কাজ করানো হতো। প্রতি রাতেই বসতো মদের আসর। এক পর্যায়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। পরে পুলিশের হাতে ধরা দিয়ে দুই মাস জেল খাটার পর গত ১৮ এপ্রিল জর্ডান থেকে শূন্যহাতে বাড়ি ফেরেন গর্ভবতী তরুণী।
দেশে ফেরার পর গত ১০ মে জাগো নিউজে ‘জর্ডানে যৌন নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন প্রবাসী তরুণী’ শিরোনামে একটি সংবাদও প্রকাশিত হয়েছিল।
ওই তরুণী জানান, সেনিয়ার বাসায় ১০ মাস তাকে আটকে রেখে যৌনকাজে বাধ্য করা হলেও একটি টাকাও তুলে দেয়া হয়নি তার হাতে। শূন্য হাতেই তিনি বাড়ি ফিরেছেন। তিনি তার জীবনটা নষ্ট করার জন্য সোনিয়া আক্তারের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন।
একইসঙ্গে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তরুণী এই মা। সামাজিকভাবে কী পরিচয় দেবেন এই সন্তানের। প্রতিবেশীরা নানা ধরনের কথা শুনাচ্ছেন তাকে ও তার পরিবারকে।
তিনি আরো জানান, সেনিয়ার বাসার নিচ তলায় গরজিদ নামে এক ভারতীয় নির্মাণ শ্রমিক থাকতেন। তার সন্তানের বাবা ওই গরজিদ বলে দাবি করেন তিনি।
মেয়েটির মা জানান, বড় আশা করে মেয়েকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এই সন্তান কার পরিচয়ে এখন বড় হবে তা নিয়েই যত দুঃশ্চিন্তা তাদের।
মেয়েটির বাবা জানান, বিদেশ থেকে মেয়ে গর্ভবতী হয়ে ফেরার পর থেকেই সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না। কন্যা সন্তান প্রসব করার পর আরো লজ্জায় পড়েছি। সমাজের মাতবর আলেক উদ্দিন কোরবানির ঈদের আগে জানিয়ে দিয়েছেন সমাজ থেকে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। সমাজের মানুষ তাদের পাশে নেই। অথচ কাশেম আর সোনিয়ার জন্য তার মেয়ের আজ এই অবস্থা। তাদের কোনো বিচার হলো না। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
অভিযুক্ত দালাল আবুল কাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অনেক নারী শ্রমিককে তিনি বিদেশে পাঠিয়েছেন। ওই তরুণীর মতো এমন ঘটনা কারো সঙ্গে হয়নি। এর জন্য তিনি দায়ী নন, সোনিয়াই তাকে দিয়ে খারাপ কাজ করিয়েছে।
সিংগাইর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ইমাম হোসেন জানান, অন্তঃসত্ত্বা হয়ে নারী শ্রমিক দেশে এসে সন্তান প্রসবের ঘটনা তার জানা নেই। মেয়েটির পরিবার যদি এ ব্যাপারে আইনগত সহায়তা চায় তাহলে সেটা দেয়া হবে।
বি.এম খোরশেদ/এফএ/পিআর