খেয়ে বিল না দেয়ায় ডিবি পুলিশের দুই কর্মকর্তাকে পিটুনি
নারায়ণগঞ্জে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সঙ্গে যুবলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ডিবি পুলিশের পাঁচ কর্মকর্তাসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। রোববার রাতে শহরের খানপুরস্থ চৌরঙ্গী পার্কের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর বরফকল খেয়াঘাট সংলগ্ন চৌরঙ্গী ফ্যান্টাসী পার্কের সামনে মাইলাইফ কেয়ার ফাস্টফুড নামে একটি দোকানে পরিবার পরিজন নিয়ে খেতে যান জেলা ডিবি পুলিশের এএসআই আমিনুল ও এএসআই বকুল। এ সময় মিল্কশেক খাওয়ার পর মিল্কশেকটি ভালো হয়নি দাবি করে বিল দিতে রাজি হননি এএসআই আমিনুল ও এএসআই বকুল। এ সময় তাদের সঙ্গে ফাস্টফুডের মালিক স্থানীয় ১১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি জালালের ছেলে আলামিন ও রবিন বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এ সময় যুবলীগ নেতা জালাল ও তার স্ত্রী রিনা ইয়াসমিন ঘটনাস্থলে আসলে ডিবির দুই এএসআই তাদেরকে মারধর করেন। এতে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ওই দুই এএসআইকেও বেধড়ক পিটুনি দেয়। এ সময় খবর পেয়ে ডিবির পরিদর্শক মাসুদ, এসআই মিজান ও এসআই সায়েম ঘটনাস্থলে আসলে এলাকার লোকজন লাঠিসোটা দিয়ে তাদেরকেও বেধড়ক পিটুনি দেয়। পরে অতিরিক্ত ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদেরকে উদ্ধার করে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। এসময় যুবলীগের নেতাকর্মীরা প্রায় ২০ মিনিট নারায়ণগঞ্জ-সিদ্ধিরগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে যুবলীগ নেতা জালাল, তার স্ত্রী রিনা, দুই পুত্র আলামিন ও রবিনকে খানপুরস্থ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেয়া হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক খানপুরস্থ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের সামনে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী।
খবর পেয়ে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম ও নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম হাসপাতালে গিয়ে ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে জেলা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজান ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) সায়েমকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর ডিবি পুলিশের এএসআই আমিনুল ও বকুলকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এছাড়াও আহত যুবলীগ নেতা জালাল, আলামিন ও রবিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর জালালের স্ত্রী রিনা, আলামিনসহ আহত অন্যদের নারায়ণগঞ্জ খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
মাই লাইফ ফাস্টফুডের মালিক জালাল উদ্দিনের স্ত্রী রীনা ইয়াসমীন বলেন, রাতে ডিবির এএসআই আমিনুল ও বকুল একজন নারী নিয়ে দোকানে আসেন। তারা লাচ্ছি, কফিসহ বিভিন্ন খাবার খেয়ে বিল না দিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। এমন সময় আমার ছেলে রবিন তাঁদের কাছ থেকে বিল চাইলে বরফ কম দেয়ার অভিযোগ তুলেন এবং নিজেদেরকে পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে বিল দিতে চাচ্ছিলেন না। বিল না দিতে চাইলে এ ঘটনায় প্রতিবাদ করলে রবিনকে থাপ্পর দেন তাঁদের একজন। এ ঘটনায় প্রতিবাদ করায় আমার স্বামী জালাল উদ্দিন ও অপর ছেলে আলামিনকে মারধর করেন ডিবির দুই কর্মকর্তা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে বাধা দিলে তারা দু’জন আমাকেও ব্যাপক মারধর করেন।
জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম জানান, ডিবির দুই এএসআই পরিবার নিয়ে চৌরঙ্গী পার্কে ঘুরতে যান। পরে তারা পার্কের সামনে একটি ফাস্টফুডের দোকানে খাবারের অর্ডার দেন। খাবারের মান ভালো না হওয়ায় দোকানের লোকজনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে তারা একত্রিত হয়ে ডিবি পুলিশের ওপর হামলা চালায়।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডিবি পুলিশের কোনো কর্মকর্তা দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শাহাদাত হোসেন/আরএআর/জেআইএম