দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও মিলছে না ফিরতি টিকিট
পরিবার-প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন শেষে এবার কর্মস্থলে ছুটছে মানুষ। শনিবার বরিশালের বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে নেমেছিল যাত্রীদের ঢল। রোববার সকালেও রাজধানীমুখী মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
সরকারি ছুটি অনুযায়ী ঈদুল আজহার পর প্রথম কর্মদিবস শুরু হয়েছে রোববার। অনেক বেসরকারি অফিস ছুটি শেষে শুরু হয়েছে শনিবার। তবে শনিবার ও রোববার কর্মস্থলে ফেরা মানুষের ঢল নামে বরিশালে। দুর্ভোগ, ভোগান্তি মাথায় নিয়েই কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ।
বরিশাল থেকে লঞ্চগুলো শনিবার রাতে ছাড়লেও দুপুর থেকেই যাত্রীরা লঞ্চঘাটে আসতে শুরু করেন। যাত্রীর ভিড়ে কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিল লঞ্চঘাট। টার্মিনাল ছাড়ার নির্ধারিত সময়ের আগেই যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যায় লঞ্চগুলো।
এদিকে, সড়ক পথেও ছিল একই অবস্থা। অনেকেই অগ্রিম টিকিট কেটে রেখেছেন। ফলে বাসস্ট্যান্ডে এসে নতুন করে টিকিট পাননি কেউ কেউ। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে অনেককে টিকিট কেনে গন্তব্যে গেছেন। যাত্রীদের অত্যাধিক চাপ থাকায় টিকিট না পেয়ে অনেককে বিকল্প ব্যবস্থায় গন্তব্যে ফিরতে দেখা যায়। রোববার সকালে বাসস্ট্যান্ড গিয়ে একই অবস্থা দেখা গেছে।
রোববার সকালে বরিশালের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ছিল যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। মাওয়া রুটের বাসের টিকিট সংগ্রহের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। দ্বিগুণ টাকা দিয়েও মিলছে না টিকিট। ফলে যে যেভাবে পারছে গন্তব্যে ছুটছেন।
নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে টিকিটের জন্য সিরিয়ালে দাঁড়ানো মো. রাফিউল বলেন, এক ঘণ্টা ধরে টিকিটের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। ডাবল ভাড়া নেয়া হচ্ছে। তবুও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকজনের কাছে টিকিট বিক্রি করে আবার বন্ধ করে দেয়া হয়। বাস কাউন্টারগুলোর এমন দৌরাত্ম্য যেন দেখার কেউ নেই।
এদিকে, লঞ্চের টিকিট কাউন্টারে কেবিনের জন্য আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, ২৫-২৬ আগস্ট বরিশাল থেকে ঢাকাগামী লঞ্চের কেবিনের টিকিটের জন্য ঈদের আগে থেকে বিভিন্ন কাউন্টারে ঘুরেছেন তারা। ঈদের পরও বিভিন্ন কাউন্টারে গিয়ে টিকিট পাননি। ফলে ঝুঁকি নিয়ে তাদের গন্তব্যে ফিরতে হবে।
এমভি পারাবত-১২ লঞ্চের ইনচার্জ মো. নজরুল ইসলাম খান বলেন, আগামী ২৭ আগস্ট পর্যন্ত ঈদের অতিরিক্ত চাপ অব্যাহত থাকবে। লঞ্চের কেবিনের সব টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে।
লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ঈদের অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে নিয়মিত সার্ভিসের পাশাপাশি ২৫, ২৬ ও ২৭ আগস্ট বিশেষ সার্ভিসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অবস্থা বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
একাধিক লঞ্চের কর্মচারীরা জানান, শনিবার দুপুর ১২টার পর থেকেই লঞ্চের ডেকের জায়গা দখল করতে শুরু করেন যাত্রীরা। বিকেল ৫টার পর পন্টুনসহ আশপাশের এলাকা জনস্রোতে পরিণত হয়। রাতে লঞ্চগুলো বরিশাল ছেড়ে সকালে ঢাকায় পৌঁছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশাল দফতরের নৌ-নিরাপত্তা শাখার উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু বলেন, শনিবার রাতে বরিশাল থেকে ১৫টি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সবগুলো লঞ্চ যাত্রীতে পরিপূর্ণ ছিল।
লঞ্চের ছাত্রীদের অভিযোগ, ডেকে চাদর বিছিয়ে জায়গা দখল করে রেখেছেন লঞ্চের কর্মচারীরা। ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় ওই জায়গা যাত্রীদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। একইসঙ্গে কর্মচারীদের কেবিন যাত্রীদের কাছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
নৌ-পুলিশের পরিদর্শক মো. আবু তাহের বলেন, নৌপথে যাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে লঞ্চঘাট এলাকায় নৌ-পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ডসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রী চাপের কারণে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা ও ভোগান্তি লাঘবে কাজ করছি আমরা।
সাইফ আমীন/এএম/এমএস