ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে রাঙ্গামাটিতে জনতার ঢল

প্রকাশিত: ০৬:০৬ পিএম, ০৯ আগস্ট ২০১৫

রোববার আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে রাঙ্গামাটিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশ ও শোভাযাত্রায় নেমেছে অগণিত জনতার ঢল। সমাবেশ স্থলসহ শহরের প্রধান সড়কে তৈরি হয় জনতার স্রোত। মিছিল ও শ্লোগানে অংশ নেন উৎসব, আনন্দ আর প্রতিবাদমুখর হাজার হাজার জনতা। এক বর্ণাঢ্য উৎসব আর আনন্দঘন পরিবেশে এবং প্রতিবাদ, ক্ষোভ ও নানা দাবির মধ্য দিয়ে রাঙ্গামাটিতে দিবসটি পালন করেছেন আদিবাসীরা।

দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল শাখার উদ্যোগে সকাল ৯টায় রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে আয়োজিত সমাবেশ ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন করেন চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। ওই সময় পরিবেশিত হয়েছে উদ্বোধনী নৃত্য-সঙ্গীত।

সংগঠনের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের ২৯৯ পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসনের সদস্য ঊষাতন তালুকদার। এছাড়াও রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি চাকমা, ভাইস চেয়ারম্যান রিতা চাকমা, এমএন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক বিজয় কেতন চাকমা, সচেতন নাগরিক কমিটির জেলা সভাপতি কুমার চাঁদ রায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন।

এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক ইন্টুমণি তালুকদার। অনুষ্ঠানে ব্যানার নিয়ে ইউপিআর রাঙ্গামাটি কমিটিও অংশ নিয়েছে।

‘২০১৫ উত্তর এজেন্ডা: আদিবাসী জাতিগুলোর জীবনধারা উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে এবং ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়নসহ আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি চাই’ শ্লোগানে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে পালিত হয়েছে এবারের আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসটি।

এ উপলক্ষে তিন পার্বত্য জেলা, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক কর্মসূচি পালিত হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে অংশ নেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম সভাপতি ও পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমাসহ আদিবাসীদের শীর্ষ নেতারা।

রাঙ্গামাটিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উৎসব-আনন্দে প্রতিবাদ ও নানা দাবি নিয়ে অংশ নেন পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত চৌদ্দ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর হাজার হাজার নারী-পুরুষ। স্ব স্ব জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যগত জাতীয় পোশাক পরে জমায়েত হন রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে। এতে সকাল ৯টা থেকে নামে হাজার জনতার ঢল।

উদ্বোধনী সমাবেশ শেষে পৌরসভা প্রাঙ্গণ হতে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে রাজবাড়ির জেলা শিল্পকলা একাডেমি গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় নৃত্য-সঙ্গীত এবং প্রতিবাদ ও দাবি সম্বলিত শ্লোগানে হাজার হাজার আদিবাসী নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে মুখর হয়ে ওঠে গোটা রাঙ্গামাটির রাজপথ।

মিছিল শ্লোগানে সরকার সংবিধানে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না করায় তীব্র প্রতিবাদ জানান অংশগ্রহণকারী জনতা। তারা দাবি জানিয়েছেন অবিলম্বে সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নসহ আদিবাসীদের মৌলিক অধিকারগুলো মেনে নিতে।

আদিবাসী নেতারা বলেন, সরকার অবিলম্বে আদিবাসীদের দাবিগুলো মেনে না নিলে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, সংবিধানে সরকারের চাপিয়ে দেয়া জাতিগত পরিচিতি আদিবাসীরা কখনো মেনে নেননি। আমরা ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী কিংবা সম্প্রদায়’ এসব চাইনি। চাই আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি। আদিবাসী জনগণের আত্ম-পরিচয় দেয়ার অধিকার রয়েছে। জোর করে কেউ তাদের জাতিগত পরিচিতি বদলে দিতে পারে না।

রাজা দেবাশীষ আরো বলেন, সরকারের পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সদিচ্ছা নেই। এখন চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চাইছে সরকার। পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে পাহাড়ে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন না করায় পাহাড়ে আবার নতুন করে ক্ষোভ ও অশান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, সংবিধানে আমাদেরকে আদিবাসী হিসেবেই স্বীকৃতি দিতে হবে। সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ জাতিসত্তার পরিচয়, ভূমি, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সংস্কৃতির মৌলিক অধিকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নসহ আদিবাসী জনগণের মৌলিক অধিকার দিতে হবে।

তিনি বলেন, আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্বীকৃতি দিতে ২০১১ সালের জুন মাসে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে সরকারে বিরাট সুযোগ ছিল। আমরাও তাতে খুব আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু সরকার আদিবাসী জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করে সংবিধানে ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়’ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে এবং বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আদিবাসী জনগণ সেটা কোনোভাবেই মেনে নেননি।

তিনি বলেন, সরকারকে আদিবাসীদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। দ্রুত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। সংবিধানে আদিবাসীদের জাতিগত স্বীকৃতি দিতেই হবে।

সুশীল প্রসাদ চাকমা/বিএ