চামড়া সংগ্রহে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন ফড়িয়ারা
একদিকে সবাই যখন ঈদের আনন্দে তখন কিছু লোক বস্তা হাতে গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটে বেড়াচ্ছেন কোরবানির চামড়া সংগ্রহের জন্য। কোরবানির মৌসুমে এই মৌসুমি ক্রেতাদের মানুষ চেনে ‘ফড়িয়া’ হিসেবে।
তারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে চামড়া কেনে বিক্রি করেন পাইকার অথবা ট্যানারি মালিকদের কাছে। ঈদে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ উপভোগের ভাগ্য আর তাদের হয় না। এ দৃশ্য চোখে পড়ে যশোরের বেনাপোল ও শার্শার সর্বত্র।
তবে অনেক ফড়িয়া জানান, বিভিন্ন মাদরাসা ও এতিমখানার হুজুররা দানের চামড়ার সঙ্গে নতুন নতুন চামড়া কেনে নিচ্ছে। পরে তাদের কাছ থেকে আমাদের উচ্চমূল্যে চামড়া কিনতে হয়।
বেনাপোলের চামড়া ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, ঈদ আমাদের একটি বড় উৎসব হলেও ব্যবসার কারণে দিনটি উপভোগ করতে পারি না। ফড়িয়াদের কথা বাদই দিলাম। বছরের এই দিনটি তাদের রোজগার সবচেয়ে বেশি হয়।
শার্শার জামতলা এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী ওসমান আলি সাহাজী বলেন, এবার চামড়া কেনার জন্য ৫ জন ফড়িয়াকে টাকা দিয়েছি। এবার লক্ষ্য ১২০০ চামড়া সংগ্রহ করা। গত বছর এক হাজার চামড়া কিনেছি। আমার মতো সব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ঈদের নামাজের পরপরই পাড়া-মহল্লায় নেমে পড়ে। অনেক ব্যবসায়ী পশু জবাইয়ের আগেই চামড়ার দাম দিয়ে দেন। আমি নিজে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০০ গরুর চামড়া ও দেড়শ ছাগলের চামড়া কিনেছি।
তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কমে চামড়া কিনতে হয়। কারণ ওই দামে ট্যানারি মালিকরা কিনবেন। তবে সবাই সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি করতে চায়। সর্বোচ্চ ২৫শ সর্বনিম্ন ৫শ টাকা দিয়ে চামড়া কিনেছি।
শার্শার নাভারণ বাজারের চামড়া ব্যবসায়ী শেখ হাবিবুর রহমান জানান, তার এলাকায় চামড়া ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় একশ। পাশাপাশি পাঁচ থেকে সাতশ ফড়িয়া পশুর চামড়া সংগ্রহ করেন। প্রতিজন চামড়া ব্যবসায়ী পাঁচ থেকে সাতজন ফড়িয়া নিয়োগ দেন।
শার্শার সামটা গ্রামের ফড়িয়া আজিজুল হক বলেন, ব্যবসায়ীদের দেয়া টাকা নিয়ে আমরা বিভিন্ন গ্রাম থেকে কোরবানির পশুর চামড়া কিনি। তিনজনের গ্রুপ করে এ কাজ করি। যত বেশি দৌড়াব ততবেশি চামড়া পাব।
বেনাপোলের চামড়া ব্যবসায়ী আলী কদর বলেন, ঈদের দিন সকাল থেকে পশুর চামড়া বেচাকেনা শুরু হয়। যে ফড়িয়া যত বেশি চামড়া পাবে, ঈদে তার লাভ তত বেশি। ফড়িয়াদের কাছে ঈদ মুখ্য বিষয় নয়, চামড়ার সংখ্যা বাড়ানো মুখ্য।
তিনি বলেন, এবার চামড়া ফুট মেপে কিনি না। গরুর দাম ৫০ হাজার টাকার ওপরে থাকলে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে কিনেছি। ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার গরু হলে চামড়ার দাম দিয়েছি এক হাজার টাকা। এর নিচের দামের গরুর চামড়া কিনেছি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে।
মো. জামাল হোসেন/এএম/পিআর