আ.লীগ নেতাদের নেতৃত্বে সিলেটে অর্ধশতাধিক অবৈধ পশুর হাট
ঈদের আগ মুহূর্তে সিলেট নগরজুড়ে অবৈধ পশুর হাট বসানো হয়েছে। শুধুমাত্র মহানগরেই অন্তত ১৭টি অবৈধ পশুর হাটের তথ্য পাওয়া গেছে। সবগুলোর পেছনেই আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরো জেলায় ২২টি পশুর হাটের অনুমোদন দেয়া হয়। সিলেট সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ হাট বসাতে নিষেধও করা হয়। তবে তা না মেনে বসানো হয়েছে অবৈধ হাট।
জানা যায়, সিলেট নগরে বৈধ হাট রয়েছে ১২টি। এগুলো হচ্ছে- কোতোয়ালি মডেল থানার কাজির বাজার পশুর হাট, জালালাবাদ থানার শিবের বাজার পশুর হাট, কুড়িরগাঁও (ইসলামগঞ্জ বাজার) পশুরহাট, বিমানবন্দর থানার সাহেবের বাজার সুন্নিয়া হাফিজিয়া দাখিল মাদরাসার মাঠে স্থাপিত পশুর হাট, দক্ষিণ সুরমা থানার লালাবাজার পশুর হাট, কামালবাজার পশুর হাট, মোগলাবাজার থানার জালালপুর পশুর হাট, হাজিগঞ্জ বাজার ও রাখালগঞ্জ বাজার পশুর হাট এবং শাহপরান থানা এলাকায় আরও তিনটি অস্থায়ী পশুর হাট বসবে।
এর বাইরে মহানগর ও নগরের আশপাশে অর্ধশতাধিক অবৈধ পশুর হাট গড়ে উঠেছে। নগরের লালটিলা, কয়েদির মাঠ, আম্বরখানা (আবাসন হাউজিং), টিলাগড়, শাহী ঈদগাহ, চৌকিদেখি, আখালিয়া, মেন্দিবাগ (জালালাবাদ গ্যাস অফিসের পেছনে), তেররতন, দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুল, কদমতলী (ফল মার্কেটের সামনে), লাক্কাতুরা, মাদিনা মার্কেট, পাঠানটুলা, হাউজিং এস্টেট (দর্শন দেউড়ি), কুমারগাঁও, শাহী ঈদগাহ, রিকাবীবাজার এলাকায় অবৈধভাবে পশুর হাট বসানো হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় রিকাবীবাজারের অবৈধ পশুর হাটে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এর আগে বিকেলে দলদলি চা বাগানের অবৈধ হাট উচ্ছেদ করে সদর উপজেলা প্রশাসন। তবে একটি হাট উচ্ছেদ করলেও বাকি অবৈধ পশুর হাট উচ্ছেদে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা নেই।
জানা যায়, বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা পশুর হাটের নেতৃত্বে রয়েছেন ক্ষমতাসীনদল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কিছু নেতা। টিলাগড় পয়েন্টে বিশাল সামিয়ানা টানিয়ে বাঁশ বেঁধে তৈরি করা পশুর হাটের নেপথ্যে রয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ আজাদুর রহমান আজাদ। অন্যদিকে নগরের প্রবেশ মুখ কুমারগাঁও তেমুখী এলাকায় গড়ে তোলা অবৈধ অস্থায়ী পশুর হাট। যার নেতৃত্বে রয়েছেন সরকারদলীয় স্থানীয় কিছু নেতা।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, বৈধ পশুর হাট ছাড়া রাস্তায় গরুর হাট বসানো যাবে না। এমন নির্দেশ ঢাকা থেকে পাওয়ার পর বিষয়টি সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারকে জানানো হয়েছে। এখন এই সিদ্ধান্ত তারাই নেবেন।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুহম্মদ আব্দুল ওয়াহাব বলেন, নগরের কাজিরবাজারসহ ১১টি হাট বসানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে। এর বাইরে কোথাও হাট বসতে দেয়া হবে না। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে যদি কোনো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। আর এতে আমাদের সহযোগিতা চাওয়া হয় আমরা অবশ্যই অবৈধ পশুর হাট বন্ধে উদ্যোগ নেব।
কাজির বাজার পশুর হাটের ম্যানেজার সাহাদাত হোসেন লুলন অভিযোগ, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে করে সিলেটে গরু নিয়ে আসেন বেপারীরা। গরুবাহী ট্রাক বিভিন্ন সড়ক দিয়ে প্রবেশ করার পরপরই মোটরসাইকেল দিয়ে ট্রাককে ঘিরে ধরে অথবা বিভিন্ন লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে জোরপূর্বক হুমকি-ধামকি দিয়ে অবৈধ বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে বৈধ বাজারের ইজাধার ও সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ছামির মাহমুদ/আরএ/এমএস