সিলেটে অবৈধপথে আসছে গরু
ঈদুল আজহা উপলক্ষে সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বানের পানির মতো অবৈধপথে ভারত থেকে গরু আনা হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গরু আসছে সিলেটের অন্যতম পর্যটন এলাকা গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি সীমান্ত দিয়ে। সীমান্ত পেরোনোর পর গরুগুলো কিছুটা নৌপথ ও কিছুটা সড়কপথ ভ্রমণ শেষে সিলেট নগরে প্রবেশ করছে।
স্থানীয়রা জানান, পর্যটন স্পট বিছনাকান্দিতে প্রতিদিন ভিড় করেন অসংখ্য পর্যটক। তবে মাসখানেক ধরে বিছনাকান্দিতে গরুর আনাগোনা বেড়ে গেছে। মনে হবে যেন বিছনাকান্দিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে গরুপাল। তীব্র গরমে গা ভেজাচ্ছে ঝর্ণার পানিতে। বাস্তবে গরুগুলো অবৈধভাবে নিয়ে আসা হচ্ছে সীমান্তের ওপার ভারত থেকে।
কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, সিলেট কার্যালয় সূত্র জানায়, ভারত বৈধভাবে বাংলাদেশে গরু রফতানি করে না। তবুও প্রতি বছর ঈদুল আজহার আগে সিলেটের সীমান্তগুলো দিয়ে অসংখ্য গরু ভারত থেকে আসে। এসব গরু আমদানি বন্ধ করতে না পেরে গত বছর সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তে চারটি করিডোর খোলা হয়েছে। এসব করিডোর দিয়ে আনা গরু মাত্র ৫০০ টাকা রাজস্ব প্রদানের মাধ্যমে দেশে প্রবেশের বৈধতা দেয়া হয়। তবে চোরাকারবারিরা এই টাকা ফাঁকি দেয়ার জন্য করিডোর দিয়ে না এনে অন্য সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে গরু নিয়ে আসছে। এই চোরাচালানে বিজিবির স্থানীয় দায়িত্বশীলরা জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় প্রশাসন আর রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অসাধু কিছু বিজিবি সদস্যের প্রশ্রয়ের কারণে এই গরু চোরাচালান বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবে বিজিবির কর্মকর্তা গরু চোরাচালানের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, সরকারকে নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে বৈধভাবেই আসছে গরু।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সিলেট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দিন আহমদের দাবি, সিলেটে কোরবানির চাহিদা পূরণের মতো যথেষ্ট দেশি গবাদিপশু রয়েছে। ফলে গরু আমদানির প্রয়োজন নেই। আমদানি করলে স্থানীয় খামারিরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সিলেটে এবার প্রায় ৫ লাখ গবাদিপশু কোরবানি দেয়া হবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
শুক্রবার বিছনাকান্দিতে ঘুরে দেখা যায়, সীমান্তের ওপারের ভারতীয় টিলা থেকে দলবেঁধে নেমে আসছে গরু। টিলা থেকে নেমে ঝর্ণার পানিতে সাঁতরে গরু প্রবেশ করছে বাংলাদেশে। ওপারের টিলার উপর থেকে কয়েকজন এদিকে ছেড়ে দিচ্ছেন গরুগুলোকে। এপারে আসার পর আরও কয়েকজন গুণে গুণে গরুগুলো ইঞ্জিন নৌকায় তুলছে। আশপাশেই বিজিবিই সদস্যরা টহল দিলেও এ বিষয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের।
স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসা গরুর একটা ছোট অংশ বিজিবি আটক করে নিয়ে যায় নিকটবর্তী করিডোরে। সেখানে ৫০০ টাকা রাজস্ব প্রদান করে সেগুলোকে বৈধ করিয়ে নেয়া হয়। তবে প্রতিদিন আসা গরুর বড় অংশই কোনো রাজস্ব না দিয়ে অবৈধভাবে দেশে নিয়ে আসা হয়। গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি ছাড়াও একই উপজেলার পাংথুমাই, জাফলং, বিয়ানীবাজার উপজেলার শ্যাওলা, সুনামগঞ্জের বড়ছড়াসহ কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে অবৈধপথে গরু আসছে।
কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, সিলেটের কমিশনার ড. মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গত বছর থেকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জের মাঝেরগাঁও, হবিগঞ্জের বাল্লা ও সুনামগঞ্জের ছাতকে গরু আমদানির জন্য করিডোর উন্মুক্ত করে রাজস্ব বিভাগ। অথচ করিডোরের চাইতে অবৈধপথেই বেশি গরু আসছে। আর সীমান্ত দেখভালের দায়িত্ব তো আমাদের নয়। তাই আমরা এগুলো ঠেকাতে পারছি না।
তিনি বলেন, অনেক সময় অবৈধভাবে প্রবেশ করা গরু বিজিবি আটক করে আমাদের স্থানীয় অফিসে নিয়ে যায়। কাস্টমস কর্মকর্তা নির্ধারিত অংকের জরিমানা আদায় করে গরুর গায়ে একটি সিল মেরে বৈধতা প্রদান করেন।
শফিকুল ইসলাম বলেন, করিডোরগুলোর মধ্যে কোম্পানীগঞ্জের মাঝেরগাঁও দিয়ে সবচেয়ে বেশি গরু আসে। এই করিডোর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪০০-৫০০ গরু আসে।
এ সব অভিযোগ স্বীকার করে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ পাল বলেন, বিছনাকান্দিসহ কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে গরু আসছে। এগুলো বন্ধে আমি অনেক চেষ্টা করেছি। বিজিবিকেও বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে বিজিবি ৪৮ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মহসেনুল হক কবির বলেন, করিডোর দিয়ে নির্ধারিত রাজস্ব প্রদান করেই গরু বাংলাদেশে আসছে। করিডোরের বাইরে কোনো সীমান্ত দিয়ে গরু আসছে না। সীমান্তে বিজিবির কড়া নজরদারি রয়েছে। অবৈধভাবে কোনো গরু নিয়ে আসলে বিজিবি তা জব্দ করে নিকটবর্তী রাজস্ব কার্যালয়ে হস্তান্তর করে। এরপর রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা জরিমানা করে গরুগুলো ছেড়ে দেন।
ছামির মাহমুদ/আরএ/এমএস