শিমুলিয়ার উদ্দেশে গিয়ে ঘাটে ফিরেনি ফেরি
তিনদিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। শিকড়ের টান উপক্ষো করা কঠিন। তাই পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ।
শনিবার ভোর থেকেই মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে ঘরে ফেরা যাত্রীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চঘাটে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। তবে যাত্রীর তুলনায় লঞ্চ কম থাকায় যে যেভাবে পারছে সেভাবেই লঞ্চে জায়গা করে নিচ্ছে।
কাঁঠালবাড়ি ঘাট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নৌ-যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুট। গেল কয়েক সপ্তাহ নাব্য সংকটের কারণে এই রুটের ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফেরি পারাপারে বিঘ্ন ঘটায় যাত্রীবাহী পরিবহনগুলোর যাত্রীরা নৌপথের লঞ্চ ও স্পিডবোটযোগে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে। ফেরিতে যানবাহন কম লোড করতে পারার কারণে কয়েকশ পণ্যবাহী ট্রাক এখনো ঘাটে আটকে আছে।
বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ি ঘাট সূত্রে জানা যায়, ঈদকে সামনে রেখে শনিবার সকাল থেকে ব্যস্ত হয়ে ওঠে কাঁঠালবাড়ি ঘাট। লঞ্চ-স্পিডবোটে যাত্রীরা শিমুলিয়া থেকে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে এসে নামছে। সকাল থেকে পদ্মা শান্ত থাকায় লঞ্চে যাত্রীদের ভিড় বেশি। নৌরুটে ৮৬টি লঞ্চ ও দুই শতাধিক স্পিডবোট যাত্রী পারাপার করছে।
ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শনিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটের লঞ্চ হয়ে ঈদে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের চাপ বাড়তে শুরু করে। অসংখ্য ডুবোচর ও তীব্র নাব্যতা সংকটে দেশের ব্যস্ততম এ নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সকাল থেকে ৩টি ডাম্প ফেরি ধারণক্ষমতার চেয়ে কম যানবাহন নিয়ে চালানোর চেষ্টা করেও দফায় দফায় ডুবোচরে আটকে যায়। বাকি ৭টি ছোট ও মাঝারি কে-টাইপ ফেরি কম যানবাহন নিয়ে চলছে। তবে এ রুটের ৫টি ফেরি অন্যত্র স্থানান্তর করায় সংকট বাড়ছে। উভয় ঘাটে ৩ শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে।
ঘরে ফেরার অপেক্ষায় থাকা বরিশালের যাত্রী মো. সুমন বলেন, সকালের দিকে ভিড় কম থাকে ভেবে রওনা হয়েছি। কিন্তু এখন দেখি তার উল্টো। সকাল থেকে যাত্রীদের ভিড় বেশি। পথে পথে ঝামেলা পোহাতে পোহাতে এতদূর এসেছি। তবে বাড়ি ফিরতে পারছি এটাই বড় কথা।
গোপালগঞ্জের যাত্রী শান্তা বলেন, লঞ্চঘাটে প্রচণ্ড ভিড়। বাড়ি ফিরতে হবে। যানবাহনে নিজের জায়গা করে নেয়ার প্রতিযোগিতা এখন সর্বত্র। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই শিমুলিয়া ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চ। তবে পদ্মা শান্ত থাকায় তেমন সমস্যা হয়নি। এখন বাড়ি ফিরতে পারলেই স্বস্তি।
এদিকে, গত দুই সপ্তাহ ধরে তীব্র নাব্যতা সংকটের কবলে রয়েছে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুট। নৌরুটের লৌহজং চ্যানেল মুখে নাব্যতা সংকট থাকায় ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। রো রো ফেরিসহ বন্ধ রয়েছে ১০টি ফেরি। কে-টাইপ ও মিডিয়ামসহ ছোট ৯টি ফেরি সকাল থেকে চলাচল করছে। ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় পরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ির যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। ঘরে ফেরার এই যাত্রায় দীর্ঘ সময় ঘাটে অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের।
রাশেদুজ্জামান খান নামের এক যাত্রী বলেন, ফেরিঘাটে গাড়ির দীর্ঘ সারি। ফেরিতে করে পার হতে অনেকক্ষণ ঘাটে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তাই স্পিডবোটে পার হয়ে এলাম। চালক পরে গাড়ি নিয়ে আসবে।
বিআইডব্লিউটিএ’র মেরিন কর্মকর্তা আহমদ আলী বলেন, নাব্যতা সংকট নিরসন করতে চ্যানেল মুখে খননকাজ অব্যাহত রয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হবে।
বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, এখন ছোট ৯টি ফেরি চলছে। গতকাল পরীক্ষামূলকভাবে কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে একটি রো রো ফেরি শিমুলিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। তবে শিমুলিয়া থেকে ফেরিটি কাঁঠালবাড়ি ঘাটে আসতে পারেনি। সেটি আটকা পড়েছে ডুবোচরে। আগামীকাল পর্যন্ত সকল ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হবে।
বিআইডব্লিউটিএ’র কাঁঠালবাড়ি লঞ্চঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. আক্তার হোসেন বলেন, সকাল থেকে ঘাটে যাত্রীদের ভিড়। মূলত এখন ঢাকা থেকে লোকজন ঘরে ফিরছে। কাঁঠালবাড়ি ঘাটে ঢাকাগামী তেমন যাত্রী নেই। তবে শিমুলিয়া ঘাট থেকে লঞ্চ বোঝাই করে আসছে যাত্রীরা। ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় লঞ্চে যাত্রীদের চাপ বেশি। লঞ্চঘাটে যাতে করে যাত্রীদের ভোগান্তি না হয় সেদিকে আমরা দৃষ্টি রাখছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। যেহেতু এবছর ভরা বর্ষায় ঈদ ও নদীতে নাব্যতা সংকট রয়েছে তাই ফেরিতে কিছুটা অচলাবস্থা। তাই যাত্রীদের আবহাওয়া বুঝে এ রুট ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। কোনো অবস্থাতেই লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে পদ্মা পাড়ি না দিতে সবাইকে অনুরোধ করছি।
এ কে এম নাসিরুল হক/এএম/এমএস