শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত খামারিরা
আর মাত্র তিনদিন পরই কোরবানির ঈদ। ঈদকে সামনে রেখে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন টাঙ্গাইলের গরু খামারিরা। শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এ বছর ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার ছাড়াই দেশীয় খাবার দিয়ে গরু মোটাতাজা করা হয়েছে।
গো-খাদ্যের দাম একটু বেশি হওয়ায় লালন-পালনে আগের চেয়ে খরচও কিছুটা বেশি হয়েছে বলে দাবি খামারিদের। তাদের ভাষ্য, ভারতীয় গরু না এলে ভালো দামেই খামারের গরু বিক্রি করতে পারবেন। এ গরু লালন পালন আর বিক্রি ঘিরে রয়েছে তাদের সারা বছরের স্বপ্ন।
টাঙ্গাইল জেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ৯ হাজার ৩৪৫টি গরুর খামার রয়েছে। জেলায় এ বছর ৪৫ হাজার গরুর চাহিদা রয়েছে।
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জেলার খামারগুলোতে প্রায় ৬০ হাজার গরু প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, জেলার খামারিরা প্রতি বছর কোরবানির ঈদের ৬ থেকে ৭ মাস আগে বিভিন্ন হাট-বাজার ও চরাঞ্চল থেকে কম দামে ছোট গরু কিনে আনেন। পরে তা দেশীয় পদ্ধতিতে পরিচর্যা, গো-খাদ্য, খড়, ভুষি, তিল, খৈল ও বিভিন্ন জাতের ঘাস খাইয়ে মোটাতাজা করেন।
দেশীয় পদ্ধতিতে প্রাকৃতিকভাবে গরু মোটাতাজা করার ফলে এসব গরুর চাহিদা বাজারে বেশি থাকায় এ বছর খামারিদের সংখ্যাও বেড়েছে। এছাড়া দেশীয় পদ্ধতিতে গরু লালন-পালন করে আর্থিকভাবেও লাভবান হওয়ায় এখন আর কেউ অসাধু পন্থা অবলম্বন করছেন না।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত বছর আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হওয়ার আশায় মোটাতাজা করার বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে অনেক খামারিই সর্বশান্ত হন। ফলে এ বছর তেমন কোন ঝুঁকি নিতে রাজি নন খামারিরা। কোনো কোনো খামারি বাড়ির চারপাশে রাস্তার পাশে বিভিন্ন জাতের কাঁচা ঘাস রোপণ করেছেন। এ কাঁচা ঘাসের সঙ্গে খড়, ভুষি, তিল, খৈল ও সয়াবিন খাইয়ে গরু লালন-পালন করেছেন। এ কারণে কিছুটা বেশি দামে গরুগুলো বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদি তারা।
দীর্ঘ ২০ বছর ধরে গরু মোটাতাজা করে বিক্রি করছেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের শ্রীফলিআটা গ্রামের মো. শাজাহান। গত বছর ৪টি গরু ওষুধের মাধ্যমে মোটাতাজাকরণ ও বিক্রি করে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এবার ৬টি গরু দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করছেন।
সদর উপজেলার কাতুলী ইউনিয়নের চৌবাড়িয়া গ্রামের খামারি মো. আশরাফ আলী এবার ৪টি গরু মোটাতাজা করেছেন। এর মধ্যে তিন বছর বয়সী ব্রাহমা জাতের একটি গরু কোরবানি উপলক্ষে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে দেখতে আসছেন মানুষ। তিনি গরুটির দাম হাঁকছেন ৮ লাখ টাকা। কেউ কেউ দাম বলছে ৪-৬ লাখ টাকা।
তিনি জানান, প্রাণি সম্পদ অফিসের লোকজন মাঝে মধ্যে এসে তদারকি করেন। গরুর ভালো দাম পেলে এ বছরের স্বপ্ন পুরণ হবে।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা এসএম আউয়াল হক জানান, টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় ৪৫ হাজার গরু-ছাগলের চাহিদা রয়েছে। জেলায় প্রায় ৬০ হাজার গরু-ছাগল মজুদ রয়েছে। আমদানি ছাড়াই নিজস্ব গরু দিয়ে জেলার কোরবানি কার্যক্রম সম্পন্ন করা যাবে। এ বছর খামারিরা গরুর ভালো দাম পাবে এবং তাদের স্বপ্ন পূরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আরিফ উর রহমান টগর/এফএ/আরআইপি