পারের অপেক্ষা যেন শেষ হচ্ছে না দৌলতদিয়ায়
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট। প্রতিদিন এ রুট দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার যানবাহন ও যাত্রী নদী পারাপার হয়ে থাকে। ঈদে এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় কয়েকগুন।
সম্প্রতি পদ্মায় পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোত দেখা দেয়ায় ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটের বাড়তি যানবাহন ও ঈদের অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে দৌলতদিয়ার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রতিনিয়তই সৃষ্টি হচ্ছে যানবাহনের সারি। আজ শনিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকেও ঘাটে প্রায় ৬ শতাধিক যানবাহন নদী পারের সিরিয়ালে আটকে রয়েছে।
জানা গেছে, এই নৌ-রুটে চলাচলকারী প্রায় সবগুলো ফেরি অনেক পুরাতন। ফলে স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফেরিগুলো চলতে পারে না। এছাড়া মাঝে মধ্যেই বিকল হয়ে যাচ্ছে ফেরিগুলো এবং মেরামত শেষে আবার চালছে।
যাত্রীরা জানান, সারাবছরই এ রুটে যাত্রী ভোগান্তি হয়। বর্ষা মৌসুম আর ঈদে ভেগান্তি হবে এটা এখন তারা মেনে নিয়েই আসা-যাওয়া করেন। তবে বর্ষা শুরু আর ঈদের কয়েকদিন আগে কর্তৃপক্ষ তাদের দুর্ভোগ লাঘবে তোড়জোড় শুরু করেন। এ সমস্যা সমাধানে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করা উচিত।
গরু ও পণ্যবাহী ট্রাকের চালকরা জানান, গরুবাহী ট্রাকগুলোর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সিরিয়াল দিলেও আগের ট্রাকগুলো না পারাপার হওয়া পর্যন্ত সিরিয়ালে তো থাকতেই হয়। এ সময় গরমে অনেক গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর অসুস্থ হওয়া গরুর ভালো দাম পাওয়া যায় না। এতে করে ব্যবসায়ীদের অনেক লোকসান গুনতে হয়।
এদিকে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিরিয়ালে আটকে থাকে। অনেক পণ্য গরমে পচে যায় এবং নির্দিষ্ট সময় গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। ফলে বাড়তি টাকা গুনতে হয় তাদের।
বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে দৌলতদিয়া-পটুরিয়া নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে থাকছে ২১টি ফেরি ও ৩৩টি লঞ্চ এবং ফেরি ভেড়ার জন্য রয়েছে ৬টি ঘাট। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে যাত্রীবাহী পরিবহন ও গরুবাহী ট্রাক। এছাড়া ঈদের আগের তিনদিন, ঈদের দিন ও ঈদের পরের তিনদিনসহ মোট ৭ দিন বন্ধ থাকবে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত গাড়ির চাপে নদী পারের অপেক্ষা দীর্ঘ হচ্ছে। প্রাকৃতিক কোনো দূর্যোগ না হলে এবং সবগুলো ফেরি সচল থাকলে আসন্ন ঈদে ঘরমুখো মানুষ ও পশুবোঝাই যানবাহন পারাপারে কোনো সমস্যা হবে না।
অপরদিকে ঈদে যাত্রী ভোগান্তি ও ঘাট এলাকাসহ মহাসড়কের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএসহ বিভিন্ন দফতর একাধিকবার সভা করেছে। নদীতে নিরাপত্তার জন্য নৌ-পুলিশ, ঘাট এলাকা ও সড়কে র্যাব, পুলিশ, ডিবি পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, সাদা পোশাকে পুলিশ, আনসার ও ফায়ার সার্ভিস থাকবে।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি জানান, ঈদে ঘাট এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ঈদুল ফিতরের মতো এ ঈদেও যাত্রীরা নিরাপদে ভোগান্তি ছাড়াই তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী জানান, ঈদে ঘরমুখো ও ঈদ শেষে কর্মস্থলমুখী মানুষের যাত্রা নিশ্চিত করতে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঈদের আগের ৭ দিন, ঈদের দিন ও ঈদের পরের ৭ দিনসহ মোট ১৫ দিন ঘাট এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়জিত থাকবেন।
রুবেলুর রহমান/এফএ/আরআইপি