সামনে ঈদ ব্যস্ত ঝিনাইদহের কামার পল্লী
প্রযুক্তির প্রসার ও সময়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে কামার শিল্প। কিন্তু কোরবানি ঈদ এলেই তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। আর তাই ঝিনাইদহের কামার পল্লীতে দিন রাত ঠুং-ঠাং শব্দ লেগেই আছে। কোরবানীর পশু জবাই ও গোস্ত বানানোর কাজে ব্যবহৃত অন্যতম সরঞ্জাম দা, বটি, ছুরি, চাপাতি তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
ঝিনাইদহের ৬ উপজেলার ৬৭ ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ কামার পরিবারের বসবাস। ১১ মাস অলস সময় কাটালেও কোরবানির ঈদের একমাস আগ থেকে তারা প্রায় নাওয়া-খাওয়া, ঘুম ভুলে কাজে ব্যস্ত থাকেন। হাতে অতিরিক্ত কাজ থাকার কারণে এখন অনেকেই নতুন কাজ নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
ঝিনাইদহ হাটের রাস্তার সাধন কুমার জানান, লোহা, কয়লা ও শ্রমের মূল্যবৃদ্ধি এবং পুঁজির অভাবে বছরের অন্য সময় ভালোভাবে ব্যবসা করতে না পারলেও এই সময়টাতে বেচাকেনা ভালো হয়। আর তাই তারাও ব্যস্ত পৈত্রিক পেশায়।
আরেক কারিগর বল্লভ কুমার জানান, সারা বছরের কর্মহীন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এই কয়েকদিনে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। সে কারণে কামার পল্লীর কারিগরদের চোখে ঘুম নেই। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে তারা এখন ব্যস্ত। কোনো দিকে তাকানোর ফুরসত নেই। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তাদের দা, ছুরি ও চাপাতি তৈরি এবং মেরামতের কাজ।
সন্দীপ কুমার জানান, এ শিল্পের প্রধান উপকরণ লোহা ও কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় কামাররা সমস্যায় পড়েছেন। আগে ২০-৩০ টাকায় এক বস্তা কাঠ কয়লা পাওয়া যেত। এখন তা বেড়ে ৫০-৬০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত বছর লোহার কেজি ছিল ৮০-১২০ টাকা। এ বছর তা কিনতে হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকা। কাজেই বাধ্য হয়ে আমাদের দাম বাড়াতে হচ্ছে।
শ্রমিক পঞ্চানন কুমার জানান, এ কাজ খুব কষ্টের। কয়লার আগুনে লাল টকটকে তেঁতে ওঠা লোহায় হাতুড়ি দিয়ে দুদিক থেকে ইচ্ছামতো পেটাতে হয়। লাল রঙ ফিকে হয়ে এলে পানিতে ভিজিয়ে আবারও পেটাতে হয়। কেউ বা শান দিয়ে ধার দিচ্ছে ছুরি-চাপাতি। কেউ আবার রেত দিয়ে দা-বটি আরও ধারালো করছে।
এই পেশা বাপ দাদার কাছ থেকে পাওয়া তাই কষ্ট হলেও এই পেশা ধরে রাখতে চান ঝিনাইদহের এই কামার কারিগররা।
আহমেদ নাসিম আনসারী/আরএ/আরআইপি