দুর্দশার মধ্যেও টিকে আছে গণি মিয়ার গামছা
ঝালকাঠি শহরের বুক জুড়ে প্রবাহিত বাসন্ডা নদীর পশ্চিম পাড়ে প্রায় ৪শ তাঁতী পরিবারের বসবাস ছিলো। বর্তমানে মরহুম গণি মিয়ার ছেলে নাসির উদ্দিন মিয়াসহ হাতে গোনা কয়েকটি তাঁতী পরিবার অনেক কষ্টে তাঁদের পেশা আকড়ে ধরে রেখেছে। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় মোটা কাপড়ের চাহিদা না থাকায় শুধু গামছা তৈরি করে কোনো রকমের টিকে আছে ঝালকাঠির ক’টি তাঁত শিল্প।
একটা সময় ঝালকাঠিতে রাষ্ট্রীয় বা রাষ্ট্রের বাইরে থেকে কোনো মেহমান এলে তাকে ঝালকাঠির ঐতিহ্যবাহী গণি মিয়ার গামছা উপহার দেয়া হতো। এটির এখনো প্রচলন থাকলেও নেই গণি মিয়া। গত বছরের ২৪ নভেম্বর গণি মিয়া তার ঐতিহ্যকে রেখে মারা যান। গণি মিয়ার বড় ছেলে নাসির উদ্দিন মিয়া বাবার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বসত ঘরের বারান্দায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দু’টি তাঁতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
নাসির উদ্দিন বলেন, বাবা প্রথমে বালাবাড়ি থেকে তাঁতের কাজ শিখে নিজের ঘরে বসে শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা তৈরি করতো। তখনকার নিলামবুড়ির শাড়ি বলে শাড়ির খ্যাতি ছিল। এক পর্যায়ে শাড়ি বুনানো ছেড়ে দিয়ে বাবা লুঙ্গি ও গামছা তৈরি করতো। পরে তিনি শুধু গামছা বোনা শুরু করেন।
গামছা বুননের বিষয়ে নাসির বলেন, আমি প্রতিদিনে গড়ে ২টি গামছা তৈরি করতে পারি। একেকটি গামছা বুনে প্যাকেট করা পর্যন্ত ২৫০ টাকা খরচ হয়। পাইকারি বিক্রি করি ৩০০ টাকা এবং খুচরা বিক্রি করি ৩৫০ টাকা। শিকারপুরে আমাদের নিয়ন্ত্রণে দুটি তাঁত রয়েছে। সেখানের সুতা ও রং আমরাই সরবরাহ করি। সেখান থেকে কিছু লভ্যাংশ পাই। ঋণ নেয়া ছাড়া কোথাও থেকে কোনো অনুদান পাই নি।
তবে চ্যানেল আইয়ের শাইখ সিরাজ গাবখানে একটি অনুষ্ঠানে আসলে আমাদের তাঁত শিল্প পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠান স্থলে বাবাকে ডেকে নিয়ে নগদ ১ লাখ টাকা সহায়তা করেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের তাঁত শিল্পের প্রসার ঘটানোর ইচ্ছা থাকলেও কোনো উপায় নেই। তাই আমাদের জন্য এ শিল্পের প্রসারের স্বপ্নে দেখাও ঠিক না। কিন্তু তোরাব আলী, মানিকসহ কয়েকজনে গামছা তৈরি করে আমার বাবার নামের নকল লেভেল লাগিয়ে বাজারজাত করছেন। বর্তমানে সুতা ও রঙের দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের তাঁত শিল্প হুমকির মুখে রয়েছে। সরকারি সহায়তা এবং পৃষ্ঠপোষকতা পেলে প্রসার ঘটিয়ে বাস্তবরূপে গামছাকে শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা যাবে।
এসএস/এমএস