মূল সমাজ থেকে পিছিয়ে আদিবাসীরা
বৃহত্তর সিলেটের নানান ঐতিহ্যের একটি হচ্ছে পান দিয়ে আপ্যায়ন। আর সেই পানের স্বাদ নিতে খাসিয়া পানের বিকল্প নেই। অথচ যাদের ঘামে পরিশ্রমে এই আপ্যায়ন সেই আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়ের জীবন জীবিকার করুন ইতিহাস অনেকেরই অজানা।
তাদের নেই নিজস্ব কোনো ভূমি। অন্যের কাছ থেকে লিজ নেয়া ভূমিতে সুস্বাদু সেই পান চাষ করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। উঁচু পাহাড়ের উপর বসবাসকারী অধিকাংশ খাসিয়া পুঞ্জির নেই নিজস্ব রাস্তাঘাট, স্কুল, স্বাস্থ্যসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
দেশের ৭৫টি আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনসংখ্যার শতকরা ১.১৩ ভাগ বসবাস করে সিলেটে। এরমধ্যে মৌলভীবাজারে ৬৫ পুঞ্জিতে প্রায় দশ হাজার আদিবাসী খাসিয়া বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছে। তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উৎস পানচাষ।
এছাড়া সিলেটে ১৩টি, সুনামগঞ্জে ১টি ও হবিগঞ্জে ২টি পানপুঞ্জি রয়েছে। যুগযুগ ধরে এসব জমিতে পান চাষ করে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করে এলেও ভূমির ওপর তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিশুদ্ধ পানি, সেনিটেশন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ যাতায়াত ব্যবস্থা কোনো কিছুতেই এ জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়ন ঘটছে না।
নৃ-গোষ্ঠী গবেষক সিলেট শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মো. আশরাফুল করিম বলেন, সরকার বলে ২৯টি এবং আদিবাসী ফোরাম বলে ৪৫টি। তবে আমি গবেষণায় প্রমাণ করেছি ৭৫টির বেশি আদিবাসী গোষ্ঠী বাংলাদেশে আছে। যার মধ্যে শুধু সিলেটেই আছে ৫০টির অধিক।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির অধিকার রক্ষার প্রতিটি সংগ্রামে তাদের আছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। দেশের সংস্কৃতি সমৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে ভূমিকা রাখছে কঠোর পরিশ্রমী এসব জাতিগোষ্ঠী।
তাদের কৃষ্টি, আচার-আচরণ মুগ্ধ করে পর্যটকসহ স্থানীয়দের। কিন্তু সরকারের উদাসীনতায় দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। নিজ দেশ থেকেও তারা পরবাসী। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া অন্য কোথাও নেই তাদের ভূমির অধিকার।
আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় (ককাস) কমিটির টেকনোক্র্যাট মেম্বার ড. মেসবাহ কামাল বলেন, মৌলভীবাজারের নাহার পুঞ্জি গিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে বলা যায় এটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। রাস্তা এত খারাপ যে একজন গর্ভবতী নারীকে বিপদকালীন মুহূর্তে নিয়ে যাওয়া প্রায় অম্ভব। তবে এ অবস্থা বদলানোর জন্য আমারা কাজ করছি।
সিলেট আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মন্ত্রী (হেডম্যান) ফিলা পত্মী জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের সংস্কৃতি রক্ষায় সবাই উদাসীন। আমরা বারবার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানিয়ে আসছি।
এফএ/আরআইপি