উৎকোচেই খুশি ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ
দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশদ্বার ফরিদপুরের ভাঙ্গা বিশ্বরোড মোড় চৌরাস্তা দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার যানবাহন চলাচল করে থাকে। সে হিসাবে সড়কটি দিয়ে প্রতিমাসে লক্ষাধীক যানবাহন চলাচল করে। সড়কের নিরাপত্তাসহ ক্রটিপূর্ণ যানবাহন, চালকের ড্রাইভিং লাইন্সেস, অবৈধ যান চলাচলের দেখাশোনার দায়িত্ব ভাঙ্গা হাইওয়ে থানা ও ট্রাফিক পুলিশের। কিন্তু দায়িত্ব পালনের চেয়ে যানবাহন থেকে উৎকোচ গ্রহণে আগ্রহ বেশি তাদের। এমনটাই অভিযোগ সড়কে চলাচলকারী যানবাহন চালকদের।
গত ৬ মাসে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানা পুলিশ ড্রাইভিং লাইন্সেস না থাকার অপরাধে মাত্র ৫১টি মামলা করেছে। যে সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন বাস, ট্রাক, লরি, মাহিন্দ্রা, ছোট পিকআপ, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলসহ হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে থাকে সেখানে মাসে গড়ে মাত্র ৮টি মামলা হওয়ায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাইওয়ে থানা পুলিশ যানবাহন চেক করার নামে প্রতিদিন তাদের মূল লক্ষ্য থাকে চাঁদাবাজি। প্রতিটি ট্রাকের কাছ থেকে একশ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত হাইওয়ে থানা পুলিশ আদায় করে থাকে। এছাড়াও ছোট পিকআপ, দূরপাল্লার বাস, মাহিন্দ্র, গরুর ট্রাক, কাচামালবাহী ট্রাক এবং মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, নসিমন থেকে একশ টাকা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ভাঙ্গা-শিমুলিয়া বিশ্বরোডের মালিগ্রাম, তাড়াইল, বগাইল ও ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের চুমুরদী, নওপাড়া, জদুগদিয়া এবং ভাঙ্গা-খুলনা বিশ্বরোডের পৌরসভা মোড়, মুনসুরাবাদ সংলগ্ন এলাকায় যানবাহন পরীক্ষার নামে প্রতিদিন শত শত গাড়ি চেক করে থাকে হাইওয়ে থানা ও ট্রাফিক পুলিশ। এসব গাড়ির মধ্যে প্রতিমাসে মাত্র ৮টি মামলা হওয়ার নজির রয়েছে পুলিশের খাতায়।
দক্ষিণাঞ্চলীয় সড়ক দুর্ঘটনা কবলিত এলাকা হিসেবে বহুল আলোচিত এ অঞ্চল। এই অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে প্রতিবছর শতাধীক যাত্রী প্রাণ হারায় এবং অসংখ্য যাত্রী পঙ্গুত্ব বরণ করে থাকে। ভাঙ্গা বিশ্বরোড মোড় থেকে শিমুলিয়া পর্যন্ত চলাচলকারী লোকাল বাসগুলোর বেশির ভাগই ফিটনেসবিহীন এবং চালকের ড্রাইভিং লাইন্সেস নেই।
তাছাড়াও ওই সড়কটিতে প্রতিদিন অবৈধ নসিমন, করিমনসহ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলাচল করে থাকে। আর এসব চালকদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। না আছে তাদের ড্রাইভিং লাইন্সেস না আছে কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ। শুধুমাত্র পুলিশকে মাসিক টাকা প্রদান করেই অবাধে চলাচল করে আসছে এসব অবৈধ যানবাহন।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে যখন সারাদেশ উত্তাল তখন দায়িত্বরত হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তরা যানবাহন ও চালককে জিম্মি করে চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত।
সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের একাধিক চালক জানান, দক্ষিণবঙ্গের সড়কে প্রবেশ করলেই মোড়ে মোড়ে পুলিশের চাঁদাবাজিতে আমরা অতিষ্ট। পুলিশ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশি টাকা নেয়। ফলে কাঁচামালসহ নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনে ব্যবসায়ীদের অনেক বেশি টাকা গুনতে হয়।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মাহাফুজার রহমান বলেন, আমি সদ্য এ থানায় যোগদান করেছি। সড়কটি দিয়ে যত গাড়ি চলাচল করে থাকে সে হিসাবে মাসে ৮টি মামলা খুবই সামান্য। আমরা সড়কে নজরদারি বাড়ানোসহ চাঁদাবাজি বন্ধ করতে সচেষ্ট থাকব।
এফএ/পিআর