শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে
ঢাকায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানী। আর সেই উত্তাল ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। ঢাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আন্দোলন ও বিক্ষোভ করেছে। দাবি তুলেছে নিরাপদ সড়ক ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর পদত্যাগের।
বরগুনা
ঢাকায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে বরগুনায় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নেমেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বরগুনার টাউনহল ও বরগুনা প্রেসক্লাব সংলগ্ন সদর রোড এলাকায় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে তারা। এতে বন্ধ হয়ে যায় ওই দুই সড়কের যান চলাচল।
এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন যানবাহনে চেকিং করতে দেখা যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় বরগুনা পুলিশ সুপার বিজয় বসাক শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে সড়ক থেকে সরে যায় তারা।
এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক বলেন, বরগুনায় আন্দোলনরত সকল শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। এখন থেকেই তাদের সকল দাবি বাস্তবায়নে কাজ করবে বরগুনা জেলা পুলিশ।
ব্রহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ করেছে কলেজের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এতে সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন কলেজ ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের নানা স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে শহর।
বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব চত্বরে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গায় সড়কে অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সকালে শহরের শহীদ হাসান চত্বর ও সরকারি কলেজের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় সড়ক দুটিতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের এই সমাবেশ থেকে নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ সারাদেশে নিরাপদ সড়ক গড়ে তোলার দাবি জানানো হয়।
পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে অবস্থান তুলে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা সারাদেশে নিরাপদ সড়ক ব্যাবস্থা গড়ে তোলাসহ নিরাপদ সড়ক আইন সংস্কার করে যুগোপযুগী করার দাবি জানান।
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ায় নিরাপদ সড়ক, ঘাতক বাস চালকদের ফাঁসি, মন্ত্রীদের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য না দিতে, শিক্ষার্থীদের বাস ভাড়া অর্ধেক করতে এবং সড়কে নিরাপদ ভ্রমণে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শহরের মজমপুর গেটে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। স্কুল, কলেজ বন্ধ ঘোষণার পরও কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়। মজমপুর গেট থেকে মানবন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিলটি খণ্ড খণ্ডভাবে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে থানা মোড়ে শেষ হয়।
মেহেরপুর
নিরাপদ সড়ক ও শিক্ষার্থী হত্যার বিচারের দাবিতে মেহেরপুরে মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনে অংশ নেয়।
নাটোর
নাটোরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরশিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নাটোর প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষোভ মিছিলটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবারও প্রেসক্লাবের সামনে ফিরে আসে। পরে সেখানে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের ক্ষতিপূরণ এবং দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
দিনাজপুর
দিনাজপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠা বন্ধ থাকার পরও ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ দাবিতে আন্দোলন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহরের লিলিমোড়ে এই আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ততা ঘোষণা করে শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে নৌমন্ত্রী শাহাজাহান খানের পদত্যাগ দাবি করে।
বেরোবি
নিরাপদ সড়ক, ঘাতক বাস চালকদের বিচার, নৌমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিসহ আন্দোলনরত স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের(বেরোবি) শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ক্যাম্পাস সংলগ্ন পার্কমোড়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিবাদী প্লেকার্ড প্রদর্শন করেন।
রাবি
সড়কে নিরাপত্তা বৃদ্ধি, বাস চালকদের নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করাসহ সড়কে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করলেও বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টার দিকে রাবি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে একটি মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা মিলিত হয়।
এ সময় ‘শোকে গোপাল ভাঁড়ও হাসে না, মন্ত্রী হাসে’ ‘রক্ত ঝরে রাজপথে, প্রশাসন নীরব থাকে’ এরকম বিভিন্ন প্লেকার্ড ধরে রাখে শিক্ষার্থীরা।
নয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নোয়াখালীতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নোয়াখালী-ঢাকা, নোয়াখালী-চট্রগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল প্রতিবাদ সমাবেশ ও গাড়ী ভাঙচুর করে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা দিকে চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজ, মদন মোহন উচ্চ বিদ্যালয়, বেগমগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চৌমুহনী মধ্য বাজার ও চৌরাস্তা শহীদ বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্কয়ারে মিলিত হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শ্লোগান সম্বলিত প্লেকার্ড পেস্টুনসহ বিক্ষোভ মিছিল বের করে প্রধান সড়কে এসে জড়ো হয় এবং নোয়াখালী-ঢাকা, নোয়াখালী-চট্রগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় এবং যান বাহন চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করে। এসময় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা বাসসহ যানবাহন ভাঙচুর করে।
পরে স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অনুরোধে প্রায় দুই ঘণ্টা পর মহা সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিয়ে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে জড়ো হয়ে সমাবেশ করে।
রাজশাহী
রাজধানী ঢাকায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজশাহীতেও বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানববন্ধনও হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন পালিত হয়।
আগের দিনের ঘোষণা অনুযায়ী আজ সকাল ১০টার দিকেই নগরীর জিরোপয়েন্টের রাস্তায় জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। হাতে নানা প্ল্যাকার্ড নিয়ে তারা বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
তীব্র যানজট দেখা দেয় নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার জিরোপয়েন্টসহ আশপাশের সড়কগুলোতে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয় সেখানে। পরে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন শেষে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম বলেন, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ
এফএ/আরএআর/আরআইপি