ঢাকামুখী যান চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
রাজধানীর কুর্মিটোলায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার প্রতিবাদ ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে ঢাকার প্রবেশমুখে বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। কোথাও আন্দোলনের মুখে পড়ে আবার কোথাও নিরাপত্তার অজুহাতে যান চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এতে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
গাজীপুর
গাজীপুরে ঢাকামুখী ও উত্তরবঙ্গগামী সকল যাত্রীবাহী যান চলাচল বন্ধ রেখেছে মোটর মালিক সমিতি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা মোড়ে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তারা সেখানে রাজধানীর কুর্মিটোলায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় প্রতিবাদ ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন।
একই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা ওই সড়কে চলচল করা বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে এগুলোর লাইসেন্স চেক করছে। পুলিশ সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পরিবহন শ্রমিকদের।
গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান আহমেদ সরকার জানান, পরিবহন শ্রমিক কর্মচারিরা রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তাদেরকে কেউ নিরাপত্তা দিচ্ছে না। ফলে তারা যানবাহন চালানো থেকে বিরত রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া মোড়ে বেলা ১১টা থেকে সড়ক অবরোধ করে রেখেছে শিক্ষার্থীরা। ফলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পাগলা সড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। এখানে মোটর শ্রমিকরা যান চলাচল বন্ধ না করলেও আন্দোলনের মুখে কোনো গাড়ি এগোতে পারছে না। এমনকি রেললাইনের ওপর গাছ কেটে ফেলে রাখায় ঢাকার সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে নারায়ণগঞ্জের।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করেছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় শিক্ষার্থীরা এ অবরোধ করে। এছাড়াও তারা শিমরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক (প্রশাসন) মোল্যা তাসলিম হোসেন জানান, শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করে রেখে। আমরা তাদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে মহাসড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করছি।
সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জ থেকেও ঢাকামুখি যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তবে এখানে শিক্ষার্থী অন্দোলন হচ্ছে না।
জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল হক দুলু জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কিছু যানবাহন ঢাকার দিকে রওনা হয়ে বঙ্গবন্ধু-যমুনা সেতু সংযোগ সড়ক পর্যন্ত গিয়ে ফিরে এসেছে। বর্তমানে ঢাকামুখি যান চলচল পুরোপুরি বন্ধ আছে।
টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলে কোথাও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন না হলেও ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যাত্রীবাহী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকামুখি বাসগুলো ছেড়ে গেলেও টাঙ্গাইলের কালিয়াকৈর পর্যন্ত যেতে পারছে। এরপর সেখান থেকে ঘুরে আসছে। যাত্রীরা সেখান থেকে নেমে গিয়ে বিভিন্ন ভাবে ঢাকা যাচ্ছে।
মাদারীপুর
ঢাকায় পরিবহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য মাদারীপুর থেকে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিক-শ্রমিকরা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। তবে অভ্যন্তরীণ রুটে পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবি, ঢাকায় বিভিন্ন পরিবহন ভাঙচুর করছে শিক্ষার্থীরা। এতে শ্রমিক ও মালিকদের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণে মাদারীপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া সকল ধরনের দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত পরিবহন বন্ধ থাকার হুমকি দিয়েছেন মালিক-শ্রমিকরা।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের পারিবারিক ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ‘সার্বিক পরিবহন’র ম্যানেজার মোসলে উদ্দীন জানান, এই ঘটনায় নৌ-পরিবহন মন্ত্রী ও শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান সম্পৃক্ত না থাকা সত্ত্বেও তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এরই প্রতিবাদে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
এফএ/আরআইপি