সিলেটে ভোট আজ : কে হচ্ছেন নগর পিতা?
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আজ। চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিতব্য এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে সিলেট নগরের বাসিন্দারা আগামী পাঁচ বছরের জন্য তাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করবেন।
নগরবাসীদের চোখ এখন ব্যালট পেপারের দিকে। প্রস্তুত হয়েছে ভোটের নগর সিলেট। সোমবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ২৭টি ওয়ার্ডের ১৩৪টি ভোটকেন্দ্রের ৯২৬টি কক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
রোববার বিকেলের মধ্যে ১৩৪টি কেন্দ্রে নির্বাচনের সরঞ্জামাদি কঠোর নিরাপত্তায় পৌঁছে দেয়া হয়।
নির্বাচনকে ঘিরে নগরে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্নের কথা জানিয়েছেন সিসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলী মুজ্জামান।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সিলেট সিটি নির্বাচনে ১৩৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮০ কেন্দ্রকেই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বাড়ানো হয়েছে এসব ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তাও।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন ৭ জন। এর মধ্যে বদরুজ্জামান সেলিম (বাস প্রতীক) অবশ্য আগেই আরিফুল হক চৌধুরীকে (ধানের শীষ প্রতীক) সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ফলে মাঠে আছেন ৬ জন।
তবে ভোটারদের কাছে আলোচনার শীর্ষে আছেন দু’জন- আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের বদর উদ্দিন আহমদ কামরান আর বিএনপি মনোনীত আরিফুল হক চৌধুরী।
ভোটের আগে তাই নগরবাসীর কাছে ঘুরেফিরে একটাই প্রশ্ন- আরিফ না কামরান, কে হচ্ছেন নতুন নগর পিতা? এই দুই সাবেক মেয়রের মধ্যে থেকেই একজন ফের মেয়র হতে যাচ্ছেন, এমনটিই বলছেন ভোটাররা।
বিগত সিটি নির্বাচনের হিসেব বাদ দিলে কামরানের নির্বাচনী ভাগ্য সবসময়ই ভালো। গত নির্বাচনের আগে কোনো নির্বাচনেই হারতে হয়নি তাকে। কামরানের অনুসারীরা তাই স্লোগান দিয়ে থাকেন- ‘নগরবাসীর প্রিয় নাম, বদর উদ্দিন কামরান।’ আর প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান তার ঘনিষ্ঠ সহচর আরিফুল হককে ডাকতেন ‘ডায়নামিক লিডার’ নামে।
রাজনীতিতে বিস্ময়কর উত্থান আরিফের। বার বার খাদের কিনার থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বুদ্ধি আর নেতৃত্বগুণে উঠে এসেছেন আলোচনার শীর্ষে। আজকের লড়াইটা তাই এই ‘প্রিয় নাম’ আর ‘ডায়নামিক লিডার’-এর মধ্যে।
নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মেয়র পদে ৬ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬২ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১২৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলো মুখরিত হবে ভোটারদের পদচারণায়।
গত ১০ জুলাই থেকে শুরু হওয়া নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা ২৮ জুলাই মধ্য রাতে শেষ হয়। টানা ১৮ দিন-রাত এক করে বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা যে যেভাবে পারেন নাগরিকদের মনোযোগ আকর্ষণের প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। এ কয়েক দিনে পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো নগরী।
প্রার্থীরা একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ, আচরণবিধি লঙ্ঘন, শব্দ দূষণসহ বিভিন্ন নাটকীয় ঘটনা সংবাদ শিরোনামও হয়েছেন এ কয়দিনে।
প্রার্থীদের চোখে আগামী ৫ বছরে কেমন হবে সিলেট সিটি সেটাও ইশতেহারের মাধ্যমে নগরবাসীর কাছে তুলে ধরেছেন মেয়র প্রার্থীরা। তবে সাবেক দুই মেয়রের ইশতেহারের দিকেই চোখ ছিল নগরবাসীর।
আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান নগরবাসীর কাছে শেষবারের মতো ভোট চেয়ে ইশতেহারে ফ্লাইওভার বানানোর ঘোষণা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে বাসা-বাড়িতে নতুন গ্যাস সংযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, আইসিটি পার্ক স্থাপন, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন ও আধুনিক শিল্পপার্ক স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন।
অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী নিজের ইশতেহারে নির্বাচিত হলে নগরীতে মেট্রোরেল কিংবা টিউব (আন্ডারগ্রাউন্ড রেল) চালু করবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে গেল মেয়াদের অসমাপ্ত কাজগুলোও শেষ করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
মেয়র পদে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয়জন প্রার্থী। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান (নৌকা), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী (ধানের শীষ), সিপিবি-বাসদের মনোনীত প্রার্থী আবু জাফর (মই), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন (হাতপাখা), নাগরিক ফোরামের প্রার্থী সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের (টেবিল ঘড়ি), সচেতন নাগরিক সমাজের প্রার্থী মো. এহছানুল হক তাহের (হরিণ)।
এছাড়া মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর বেশ কিছুদিন নির্বাচনের মাঠে প্রচারণা চালালেও হঠাৎ বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাওয়ায় ব্যালট পেপারে থাকবে সেলিমের বাসগাড়ি প্রতীক।
সিলেট সিটি নির্বাচনে আজ ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪ শত ৪৪ জন পুরুষ এবং ১ লাখ ৫০ হাজার ২ শত ৮৮ জন নারী ভোটার।
এমআরএম