সেই এএসপির বাবার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী মামলা
অবশেষে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের আমল গ্রহণকারী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারিসিন্ধুর ইউনিয়নের মঠখোলা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জনাব আলী।
অভিযুক্ত মতিউর রহমান সরকার বর্তমানে এগারসিন্দুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
মামলার এজাহারে রাজাকার কমান্ডার মতিউর রহমান সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়।
আদালতের বিচারক মো. নুরুল আফছার রোববার বিকেলে মামলাটি আমলে নিয়ে ফৌজদারী কার্যবিধির ২০১ ধারায় মামলাটি যথাযথ এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে (মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালে) দাখিলের জন্য বলেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আর রাজাকারদের সহযোগিতা করতেন মতিউর রহমান সরকার। তার বাবা শামসুল হক সরকার (দরবারী) ছিলেন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। ওই সময় মতিউর রহমান স্থানীয় স্বাধীনতা বিরোধীদের সহযোগিতায় পাকিস্তান রক্ষার নামে পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী বাহাদিয়া, মঠখোলা, অঙ্গিয়াদী এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন।
রাজাকার কমান্ডার মতিউর রহমান সরকার নিরীহ হিন্দু লোকদের ধর্মান্তরিত করে তাদের বাড়ি-ঘর লুটপাট করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, রাজাকার মতিউর রহমান সরকার ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনীকে খবর দিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের মঠখোলা বাজারে নিয়ে আসে। ওই দিন তার নির্দেশে হানাদার বাহিনী বাজারের ব্যবসায়ী অনিল চন্দ্র নমদাসকে গুলি করে হত্যা করে।
এ দিন মতিউর রহমান ও অন্য রাজাকারদের সহায়তায় চাঁদ মোহন বনিককে দোকান থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়।
একই দিন বাদী মুক্তিযোদ্ধা জনাব আলীর বাবা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল লতিফকে ধরে নিয়ে বেধরক মারপিটসহ তাদের বাড়ি-ঘর লুটপাট শেষে পুড়িয়ে দেয়া হয়।
এ ছাড়াও রাজাকার মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী বেশ কিছু অভিযোগ আনা হয়।
২০০৫ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় কতিপয় মুক্তিযোদ্ধাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে নিজের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। বর্তমানে তিনি সরকারের সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তার ছেলের চাকরি হয়েছে সহকারী পুলিশ সুপার পদে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে গাজীপুর জেলায় হাইওয়ে পুলিশে চাকরি করছেন।
এ দিকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে রাজাকার মতিউর রহমানের নাম বাদ দেয়া, সাময়িক সনদ বাতিল, সম্মানী ভাতা বন্ধ করা এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এরই মধ্যে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি জাগো নিউজে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার ছেলে অ্যাডিশনাল এসপি শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। রাজাকার মতিউর রহমানের মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করার দাবিতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা আন্দোলনে নামে।
নূর মোহাম্মদ/এমএএস/জেআইএম