হঠাৎ তিস্তা হলো আশীর্বাদ!
চলতি আমন মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে কৃষককূল যখন আমন আবাদে হা-হুতাশ করছিলেন তখন দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ কৃষকদের মাঝে আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে তিস্তা অববাহিকাসহ কমান্ড এলাকা আমন ধান আবাদে (তিস্তা ব্যারাজের খরিপ ২ মৌসুমে) সুফলভোগ করছেন কৃষকরা।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারছিলেন না। এখন তারা আমন রোপণসহ ক্ষেতে পর্যাপ্ত সেচ পাচ্ছেন। দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তার সেচ ক্যানেলের মাধ্যমে ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের পানি দেয়া হচ্ছে।
সূত্র মতে খরিপ-১ মৌসুমে (বোরো) নদীতে পানির অভাবে কৃষকরা সেচ পেয়েছিলেন ১৮ হাজার হেক্টর জমিত। এবার সেখানে খারিপ-২ মৌসুমে কৃষকরা সেচ পাচ্ছেন ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে।
কৃষকরা জানান, তিস্তা চুক্তি হলে শুষ্ক মৌসুমেও বর্ষা মৌসুমের মতো পানি পেলে সেচ নিয়ে আর বাড়তি দুশ্চিন্তা থাকবেনা তাদের। তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প সূত্র জানায়, তিস্তা নদীতে এখন পানির অভাব নেই। অথৈ পানির স্রোতধারায় তিস্তা এখন প্রবাহিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভূতভাবে উজান থেকে পানি আসছে। ব্যারেজ পয়েন্টে পানির উত্তাল ঢেউ। নদীর প্রবাহের সঙ্গে সেচ প্রকল্পের ৭১০ কিলোমিটার জুড়ে সকল সেচ ক্যানেল পানিতে টইটুম্বুর।
তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, তিস্তা অববাহিকায় বুধবার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে মাত্র ৩ মিলিমিটার। এর আগে এপ্রিল মাসে ১৭৩ মিলিমিটার, মে মাসে ২৮৬ মিলিমিটার, জুন মাসে ৪৪৭ মিলিমিটার ও জুলাই মাসে ২৬৬ মিলিমিটার।
একই সূত্র মতে, গেলো শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানির প্রবাহ ছিল গড়ে ৫শ কিউসেক। চলতি বছরের জুন জুলাই মাসে তিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ ছিল গড়ে ৬০ হাজার কিউসেক। তবে চলতি আগস্ট মাসে এখন পর্যন্ত তিস্তায় পানি প্রবাহ চলছে গড়ে ৩০ হাজার কিউসেক। ফলে নদী এখন নদীতে পরিণত হয়ে দুর্বার গতিতে চলছে। এতে নদীর পানি সেচ প্রকল্পে অনায়াসে প্রবেশ ঘটিয়ে তা কৃষককূলের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে তিস্তার ব্যারাজের সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় কৃষকরা খরিপ-২ মৌসুমে ভরপুর পানি পেয়ে সুফল ভোগে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছে।
তিস্তা সেচ ক্যানেলের ধারে দুন্দিবাড়ি গ্রামের কৃষক মোমেন আলী( ৪৩) জাগো নিউজকে জানান, অনাবৃষ্টি ও পর্যাপ্ত বৃষ্টির পানির অভাবে আমন ধানের চারা রোপণ করা এবং রোপণকৃত জমিতে পানি না থাকায় ক্ষেত নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে বোরো আবাদে তিস্তা সেচের পানি পেতে কষ্ট হয়েছিল। সেখানে এবার আমন মৌসুমে তিস্তা সেচ পেতে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছেনা। তিস্তা সেচখাল পানিতে ভরে গেছে। এরকম পানি যদি বোরো আবাদের সময় পাওয়া যেতো তাহলে আরো ভাল হতো।
তিস্তাপাড়ের ভাষানীর চরের মাঝি হারুন (৪৮) জাগো নিউজকে জানান, নেই পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত। কিন্তু উজানের ঢলে তিস্তা নদীতে এবার প্রচুর পানি পাওয়া যাচ্ছে। নদীতে এখন জোয়ার বইছে।
এ বিষয়ে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সম্প্রসারন কর্মকর্তা রাফিউল বারী জাগো নিউজকে জানান, দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ খরিপ-২ মৌসুমের জন্য নির্মিত। অর্থাৎ,বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির অভাব দেখা দিলে কৃষকরা এ প্রকল্পের মাধ্যমে সেচ পাবেন। যাতে আমন ধান তারা পরিপূর্ণভাবে আবাদ করতে পারেন। বর্তমানে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে পড়েছে কৃষক। তাই এ মৌসুমে নীলফামারী, দিনাজপুর ও রংপুর জেলায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন খরিপ ১ মৌসুমে (বোরো) তিস্তা নদীতে পানি সঙ্কটের কারণে কৃষকরা পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। ফলে মাত্র সাড়ে ১৮ হাজার হেক্টরে সেচ প্রদান সম্ভব হয়েছিল। খরিপ ২ মৌসুমে তিস্তার সেচ পাচ্ছে নীলফামারী জেলায় ২৩ হাজার ২৫৬ হেক্টর, রংপুর জেলায় ২৫ হাজার ২০০ হেক্টর ও দিনাজপুর জেলায় ৯ হাজার ৩২০ হেক্টর।
রংপুর কৃষি বিভাগের আঞ্চলিক অফিস সূত্র মতে এবার ৫ লাখ ৬১ হাজার ২৩৯ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে উত্তরবঙ্গের রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলা নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ১৫ আগস্ট পর্যন্ত চলবে আমন রোপণের কাজ। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প, ৯৮টি গভীর নলকূপ ও ১২ হাজার ২২৮টি অগভীর নলকূপের সাহায্যে এ ৫ জেলায় আমন রোপণ কাজ এগিয়ে চলছে। রোপণের কাজ প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে গেছে।
এমজেড/এমএস