৩২ বছর শিকলে বাঁধা, মুক্তি মেলেনি আজও
ছয় বছর বয়স থেকে শিকলে বাঁধা। এ অবস্থায় কেটে গেছে ৩২ বছর। সেদিনের শিশুটি আজ ৩৮ বছরের যুবক। দীর্ঘ ৩২ বছরে অনেক কিছু বদলালেও মুক্তি মেলেনি তার। বাড়ির পেছনে একটি গোয়ালঘরে তার বাস।
গোয়ালঘরে শিকলে বাঁধা অবস্থায় দীর্ঘ ৩২ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দাদনচক গ্রামের ফারেস আলী (৩৮)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফারেস আলীর বাবা এমরান আলী দিনমজুর। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারেননি। এমরান আলীর তিন মেয়ে ও দুই ছেলে মধ্যে ফারেস আলী বড়। জন্মের পর থেকে বাকপ্রতিবন্ধী ফারেস। কথা বলতে না পারলেও কানে কিছুটা শুনতে পান। দু’চোখে ভালোভাবে দেখতে পান না। তবে পরিবারের সদস্যদের চিনতে পারেন।
স্থানীয়রা জানায়, ছোটবেলা থেকেই ছোট-বড় গাছপালা ভেঙে ফেলত ফারেস। কারও কোনো কথা শুনতো না। উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলত। একপর্যায়ে গ্রামের সবাই তাকে পাগল বলতে শুরু করে। ফারেসের আজেবাজে কাজে অতিষ্ঠ হয়ে ছয় বছর বয়সে তার পায়ে শিকল লাগিয়ে দেয় পরিবার। এরপর বাড়ির পেছনে একটি গোয়ালঘরে তাকে আটকে রাখা হয়। গোয়ালঘরের পাশেই তার দাদা-দাদির কবরস্থান। সেখানে একটি বাঁশের খুঁটির সঙ্গে ফারেসের দুই পায়ে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোয়ালঘরে কয়েকটি চটের বস্তা দিয়ে ফারেসের জন্য বিছানা তৈরি করা হয়েছে। চটের বস্তা দিয়েই বানানো হয়েছে তার বালিশ। বিছানার উপর চুপচাপ হয়ে বসে আছেন ফারেস। কোনো সাড়া শব্দ নেই। ভাত ও বিস্কুট খেয়েই দিন কেটে যায় তার।
ফারেস আলীর বাবা এমরান আলী বলেন, সারাদিন যা আয় করি তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। ইচ্ছা থাকলেও টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছি না। বাইরে গিয়ে যদি কারও ক্ষতি করে বা কোন দিকে চলে যায় সেই ভয়ে বাধ্য হয়েই আদরের সন্তানকে ছয় বছর বয়স থেকে বেঁধে রাখছি।
তিনি বলেন, শিকলে বাঁধা অবস্থায় কেটে গেছে ৩২ বছর। প্রথম প্রথম বাঁধা থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি করলেও এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। প্রথমে আমারও কষ্ট হয়েছে, পরে এটাকে নিয়তি বলেই মেনে নিয়েছি। আমার কষ্টতো আর কেউ বোঝে না, তাই নিজের কষ্ট নিজের বুকেই চেপে রাখছি। ছেলের চিকিৎসার জন্য অনেকের সহযোগিতা চেয়েছি। কারও কোনো সহযোগিতা পাইনি। সর্বশেষ কোনোরকমে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড পেয়েছি। কিন্তু তা দিয়ে কি আর চিকিৎসা করানো যায়। একেবারে বাধ্য হয়েই ছেলেকে বেঁধে রাখছি। কেউ যদি ছেলের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করেন আমি তার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।
এ বিষয়ে দুলর্ভপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রাজিব রাজু বলেন, শিকলবন্দির ঘটনাটি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে। ডিসেম্বর মাসে তার নামে একটি ভিজিডি কার্ড দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস বলেন, যত দ্রুত সম্ভব খোঁজখবর নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হবে।
মোহা. আব্দুল্লাহ/এএম/এমএস