ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধ সংকট
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবেশ রোগীবান্ধব না হওয়ায় ভালোমানের চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। গ্রাম থেকে আসা রোগীরা এমনকি শহরের রোগীরাও সরকারি সুবিধা নিতে পারছেন না। হাসপাতাল ওষুধের তালিকা থাকলেও প্রয়োজনের সময় কোনো ওষুধ পাওয়া যায় না। একটি সংঘবদ্ধ চক্র এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। এ বিষয়ে অনেক অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
তবে রোগীদের অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসমা খান বলেছেন, চিকিৎসা সেবায় কোনো গাফিলতি করা হয় না। তারপরও আমি বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।
স্থানীয় জানায়, ঈশ্বরদীর এই সরকারি হাসপাতালটির মূল ভবনে প্রবেশের মুখে বড় সাইনবোর্ডে ওষুধের তালিকা প্রদর্শন করা হলেও প্রয়োজনের সময় এতে ওষুধ পাওয়া যায় না। এমনকি জরুরি কলেরা স্যালাইন পর্যন্ত নেই। সব রোগীদের হাসপাতালের সামনের ফার্মেসিগুলো থেকে ওষুধ কিনতে হয়।
সোমবার ২৩ জুলাই ভোরে এই হাসপাতালে ভর্তি হন ডায়রিয়া রোগী ঈশ্বরদী পৌর এলাকার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জুয়েল। হাসপাতালে না পেয়ে অতিরিক্ত দামে দোকান থেকে স্যালাইন কিনে আনলেন তার ভাই টিপু সুলতান।
দাশুড়িয়া মারমী গ্রামের ভ্যানচালক জহুরল ইসলাম বলেন, পায়ে বিষ ফোঁড়া হয়েছে হাসপাতাল থেকে ব্যথার ২-৩ টা ট্যাবলেট ছাড়া কিছুই দেয় নাই, সাড়ে ৫০০ টাকার ইনজেকশন কিনে আনতে হয়েছে। তার অভিযোগ, এই হাসপাতালে যার লোকজন আছে তাদের কোনো ওষুধ কিনতে হয় না। আমরা গরীব, আমাদের কেউ নাই তাই কিনতে হয়।
আওতাপাড়া হাটের গরু ব্যবসায়ী চাঁদ আমিন দুর্ঘটনায় আহত। ৫ দিন যাবৎ হাসপাতালে। প্রায় ৫ হাজার টাকার বেশি ওষুধ কিনেছে ধারদেনা করে। এ হাসপাতাল ড্রেসিং করতেও ২৫ টাকা করে নেয়, টাকা না দিলে ড্রেসিং করে না।
দাশুড়িয়া হাজারীপাড়া হতে এসেছেন জয়নব বেগম। তিনি জানান, তার স্বামী আবু বকর সিদ্দিকী কে হাসপাতালে আসার পর নার্সকে ডাকতে গেলে রাগ হয়ে বলে এত সেবা দেই, তবুও সাংবাদিকদের অত্যাচারে বাঁচি না।
হাসপাতালে বিছানার চাদর নাই, বালিস নাই, যেগুলো আছে ময়লা, বাথরুমের বেহাল অবস্থা, ব্যবহারের অনুপযোগী। হাসপাতালে সাধারণ রোগীর জন্য কেবিন নাই কেবিন ভিআইপি রোগীদের জন্য সংরক্ষিত থাকে।
এদিকে ঈশ্বরদী হাসপাতালে কোনো রোগী যদি রাতে আসে, সে নিশ্চিতভাবে ডাক্তার-নার্সের অবহেলার শিকার হবে। ডাকতে গেলে আগে তারা জানায়, ওষুধ বাহিরের দোকান হতে আগে কিনে আনুন, তারপর রোগী দেখবো, দম্ভ করে বললেন সিনিয়র নার্স সুলাতানা বেগম। তবে কয়েকজন ইন্টার্ন নার্স এসেছেন তারা একটু সচেতন। অপরদিকে হাসপাতালে ঝোলানো হয়েছে ওষুধের তালিকা। এতে কি কি ওষুধ পাওয়া যাবে তা উল্লেখ রয়েছে।
হাসপাতালে নার্সদের দাপটে অসহায় ও জিম্মি হয়ে পড়েছেন রোগীরা। সিনিয়র নার্সরা টানা ৭ থেকে ১৪ বছর যাবৎ দাপটের সঙ্গে চাকরী করছেন। তারা কথায় কথায় রোগীদের সঙ্গে দম্ভ দেখান। সকাল ৮ টা বাজার আগেই চলে যান কর্তব্যরত নার্স। সরকারি চাকরীর পাশাপাশি সিনিয়র নার্স সুলতানার রয়েছে ক্লিনিক ব্যবসা। তিনি অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আলাউদ্দিন আহমেদ/আরএ/পিআর