ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

শুধু সাংবাদিকতা করতেই সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন পঞ্চগড়ের শহীদ

সফিকুল আলম | পঞ্চগড় | প্রকাশিত: ০৭:৪৫ পিএম, ২২ জুলাই ২০১৮

এক সময় তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। একই সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সাংবাদিকতায়। চাকরির পাশাপাশি সাংবাদিকতার নেশা তাকে এতটাই আকৃষ্ট করেছিল যে, পেশার সম্মানে তিনি বর্তমানের সোনার হরিণ নামক সরকারি চাকরিটি ছেড়ে দিতে একবারের বেশি ভাবার সুযোগ নেননি। ওই সময় পরিবারের অনেকেই তাকে চাকরি ছাড়তে বাধা দিলেও সাংবাদিকতা যে মহান পেশা সেই যুক্তি দেখিয়ে উল্টো তাদের চুপ করে দিয়েছেন।

পরবর্তীতে সাংবাদিকতার সুবাদে তিনি স্থানীয়ভাবে অসংখ্য উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। একইভাবে ভাগ্য বদলে দিয়েছেন অনেক অসহায় মানুষের। যার সুফল তারা আজও ভোগ করছেন। অথচ একই রকম সুযোগ সুবিধার প্রস্তাব ছিল তারও ক্ষেত্রে। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি। সৎ থাকার চিন্তায় আজও বদলায়নি তার নিজের ভাগ্যটা। এতক্ষণ যে মানুষটির বর্ণনা দেয়া হলো তিনি হলেন পঞ্চগড়ের তৃণমূল সাংবাদিকতা জগতের গুরু প্রবীণ সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম শহীদ।

অস্বচ্ছল কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা সাংবাদিক শহীদের সংগ্রাম শুরু সেই ছোটবেলা থেকে। তার বাবা বোদা উপজেলা সদরের সাতখামার এলাকার মরহুম শফিউদ্দিন আহাম্মেদ ছিলেন একজন প্রান্তিক কৃষক। অল্প পরিমাণ জমিতে হালচাষ আর গায়ে গতরে খেটে স্ত্রী সন্তানের মুখে দুই বেলা খাবার তুলে দিতে হিমশিম খেতেন।

পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সাংবাদিক শহীদ ছিলেন দ্বিতীয়। সাংবাদিক শহীদ ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকেই প্রাইভেট পড়িয়ে (টিউশনি) লেখাপড়ার খরচ যোগাতেন। ছাত্র জীবনে আয় করতে শেখায় লেখাপড়ার খরচের সঙ্গে সংসারের খরচেও দুই চার টাকা যোগান দিতে হতো তাকে।

১৯৮০ সালের কথা। তার দৈন্যদশা দেখে মো. মিজানুর রহমান নামে প্রতিবেশী এক বড় ভাই এগিয়ে আসেন। তিনি সাংবাদিক শহীদের লেখাপড়া আর দৈনন্দিন খরচের যোগান দিতে কয়েকটি পত্রিকার এজেন্ট নিয়ে তাকে দেখাশোনার দায়িত্ব দেন। সেই সময় চেনা পত্রিকা বলতে ছিল দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলার বাণী, আজাদ, দৈনিক বাংলা আর সংবাদ।

এসব পত্রিকা প্রকাশিত হওয়ার পরদিন দুপুর নাগাদ বোদা এবং পঞ্চগড়ে পৌঁছাতো। সাংবাদিক শহীদের পত্রিকায় লেখালেখি শুরু সেই থেকে। স্কুলজীবনে লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি হাতে কলমে বিভিন্ন খবর লেখে তৎকালীন দৈনিক গণকন্ঠ, সাপ্তাহিক মশাল এবং দিনাজপুরের স্থানীয় দৈনিক ‘প্রতিদিন’ পত্রিকায় পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ডাক পাঠাতেন।

মাঝে মধ্যেই তার লেখা ছাপা হতো। এরই মধ্যে দৈনিক প্রতিদিন এ একটি সংবাদের মাধ্যমে তৎকালীন প্রতিদিন’র বার্তা সম্পাদক মিজানুর রহমান লুলুর নজরে পড়েন সাংবাদিক শহীদ। ১৯৮৩ সালে মিজানুর রহমান লুলুর সম্পাদনায় দিনাজপুরে ‘দৈনিক তিস্তা’ নামে পত্রিকা বের করা হলে পঞ্চগড় প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ পান সাংবাদিক শহীদ।

সাংবাদিকতা এবং লেখাপড়াকে সমান গুরুত্ব দিয়ে জীবন গড়ার লক্ষে কঠোর পরিশ্রম শুরু করেন সাংবাদিক শহীদ। ১৯৮২ সালে বোদা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর ঠাকুরগাঁও ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পাশাপাশি তিনি বাংলার বাণী, দৈনিক বাংলা এবং বালাদেশ টাইমস পত্রিকায় পঞ্চগড় প্রতিনিধি হয়ে কাজ করেন।

Panchagarh

দৈনিক বাংলা ও বাংলাদেশ টাইমসে কিছু সম্মানীও পেতেন ওই সময়। ১৯৯২ সালের ১৫ জুলাই তিনি ‘বাংলাদেশ অবজারভার’ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি এবং ১৯৯৩ সালে ‘বাংলাদেশ বেতার’ এ জেলা সংবাদদাতা হিসেবে যোগদান করেন।

সর্বশেষ ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর তিনি দৈনিক প্রথম আলো’র জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ ২০ বছর সুনামের সঙ্গে তিনি পঞ্চগড় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার পর ২০১৮ সালে অজ্ঞাত কারণে প্রথম আলোর থেকে অব্যাহতি নেন।

এরই মধ্যে মাত্র ১৯ বছর বয়সে ১৯৮৭ সালে তিনি পঞ্চগড় সদর উপজেলার গরিনাবাড়ি ইউনিয়নের লাখেরাজ ঘুমটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবেও যোগদান করেন। শিক্ষকতার পাশপাশি সাংবাদিকতা পেশা ভালোই চলছিল। পরবর্তীতে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নোতিও পান।

সর্বশেষ বোদা উপজেলার বেংহারি বনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিন যুগের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা জীবনে সাংবাদিক শহীদ শুধু ছোট শিশুদের জন্যই শিক্ষকতা করেননি। তিনি স্থানীয় পর্যায়ে তৃণমূল সাংবাদিকতারও শিক্ষক ছিলেন।

নিজের পরিবারকেও সাংবাদিক পরিবার হিসেবে গড়ে তুলেছেন তিনি। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও এক ছোটভাই জাহাঙ্গীর আলম আকাশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়ের অধ্যয়নত অবস্থা দৈনিক বাংলা পত্রিকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। পরে সংবাদ ও সিএসবি নিউজের রাজশাহী প্রতিনিধি ছিলেন। সাংবাদিক আকাশ একটি মানবাধিকার সংগঠনের সক্রিয় মানবাধিকার কর্মীও ছিলেন।

পরবর্তীতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তিনি দেশ ছাড়া হন। বর্তমানে তিনি নরওয়ে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানেই অবস্থান করছেন। তার আরেক ভাই খতিবুর রহমান একজন পরিবহন চালক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তবে সবার ছোট সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ একজন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক। বর্তমানে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক, এনটিভি এবং বাংলাট্রিবিউন’র পঞ্চগড় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।

একমাত্র ছেলেকেও তিনি সাংবাদিকতা শিক্ষা দিয়েছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি দি ডেইলি বাংলাদেশ অবজারভার এ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন। এর বাইরে তিনি স্থানীয় একাধিক সাংবাদিককে হাতে কলমে সাংবাদিকতা বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। এদের মধ্যে পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের সভাপতি সফিকুল আলম, আমির খসরু লাভলু, প্রয়াত নুরুল হুদা বাবু, নজরুল ইসলাম, সরকার হায়দার, আতাউর রহমান, গোফরান বিপ্লবের নাম উল্যেখযোগ্য। এদের সকলেই আজ বিভিন্ন গণমাধ্যমে স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি শিক্ষকতা জীবনের ২০ বছরের মাথায় বড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয় সাংবাদিক শহীদকে। পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও সংবাদ আর সাংবাদিকতার প্রতি তার অন্ধ ভালোবাসার কারণে তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের চাকরি ছেড়ে দেন।

২০০৭ সালে তিনি বোদা উপজেলার বেংহারি বনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। বয়স অনুযায়ী তিনি আরও ১৯ বছর চাকরি করতে পারতেন। অবসর গ্রহণ করার কথা ছিল ২০২৬ সালে।

Panchagarh

সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি সাংবাদিকতায় আরও সক্রিয় হয়ে কাজ শুরু করতে থাকেন। দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে তিনি অসংখ্য বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে জননন্দিত হয়েছেন। একই সঙ্গে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সমাজ সর্বোপরি স্থানীয় উন্নয়নে অবদান রেখেছেন।

তার তথ্য নির্ভর লেখনিতে অসংখ্য গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থী লেখাপড়ার জন্য আর্থিক সহযোগিতা পান। এদের অনেকে এখন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। অনেকে লেখাপড়া শেষে ভালো চাকরি পেয়ে সুখের সংসার গড়েছেন।

স্ত্রী, এক ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে সাংবাদিক শহীদের ছোট্ট সংসার। স্ত্রী মমতাজ বেগম একজন গৃহিনী। বড় ছেলে এসএম মুনিম মিতসু ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্স করছেন। আর মেয়ে শারমিন আকতার মৌরী সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৪.৯২ পেয়েছেন। সহায় সম্বল বলতে স্বেচ্ছায় অবসরের অর্থ দিয়ে কেনা জেলা শহরের ডোকরো পাড়ায় ৭ শতক ভিটেমাটির উপর একটি টিনশেডের বাড়ি।

গতকাল শনিবার দুপুরে তার বাড়িতে কথা হয় প্রবীণ সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম শহীদের সঙ্গে। কেমন আছেন, জিজ্ঞেস করতেই স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বললেন, ‘খুব ভালো আছি, এখন কাজের চাপ নেই, নিউজের জন্য ছুটে চলা নেই, অফিস থেকেও কেউ আর ফোন দেন না, কোন অনুষ্ঠানে কেউ ডাকেন না, শুয়ে বসে বাসাতেই সারাদিন কেটে যায়’। কথাগুলো বলতেই চোখ ভিজে উঠে সাংবাদিক শহীদের। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে আবারও বলতে শুরু করেন, ‘হঠাৎ করেই আর্থিক অনটনে পরে গেলাম ভাই, ২/৪ দিনের মধ্যে ছেলেটাকে পরীক্ষার জন্য ৪০ হাজার টাকা পাঠাতে হবে’। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘কীভাবে যে কি করবো, বুঝতে পারছি না’।

সাংবাদিক শহীদ বলেন, ৩৮ বছরের সাংবাদিকতায় অনেক কিছুই দেখলাম। নিউজের জন্য স্থানীয় মানুষের প্রশংসা পেয়েছি, সম্পাদকের কাছেও ধন্যবাদ পেয়েছি। সাল মনে নেই, ২০/২২ বছর আগের কথা। একদিন শুনি, পঞ্চগড়ের আমতলা কাজিপাড়া এলাকায় ভারতের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। আমি ছবি তুলে ক্যামেরার ফিল্ম ওয়াশ করে নেই। সেই ছবি ঠাকুরগাঁও গিয়ে দ্রুত ফ্যাক্স করি।

একদিন পর ‘বাংলাদেশ অবজারভার’ পত্রিকায় সেই ছবি ছাপা হওয়ায় তৎকালীন সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী এক প্রতিনিধি সম্মেলনে আমাকে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি ভাবলে এখনও শিহরিত হই। এছাড়া তেঁতুলিয়া উপজেলার রণচন্ডি এলাকার তাহমিনা আক্তার নামে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর একটি সন্তান হয়। কিন্তু বিয়ের দুই বছরের মাথায় সেই বিয়ে ভেঙ্গে যায়। পরে সেই তাহমিনা আবারও লেখাপড়া করতে স্কুলে ভর্তি হয়। কিন্তু স্কুলে তাকে ভর্তি নিতে না চাওয়ায় আমি তাকে নিয়ে ‘প্রথম আলো’তে একটি নিউজ করি। বর্তমানে তাহমিনা নামকরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার শেষ পর্যায়ে।

এমন অসংখ্য নিউজ লেখে আমি জননন্দিত হয়েছি। সাংবাদিকতার খাতিরে আমি চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। তার লেখা ‘পথ থেকে পথে’ বই এর এক জায়গায় স্থানীয় সাংবাদিক হিসেবে আমার নাম রয়েছে।

সাংবাদিকতার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে সাংবাদিক শহীদ বলেন, ১৯৮৪ সালের দিকে একটি নিউজের বক্তব্য নিতে বোদা উপজেলার তৎকালীন থানা নির্বাহী অফিসার (টিএনও) মাহমুদুল হাসানের কাছে যাই। সেই সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি অনধিকার প্রবেশের দায়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ ডেকে সহকর্মী এসএ মাহমুদ সেলিমসহ আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। আমাদের বিরুদ্ধে মামলাও দেন। আমরা ৩ দিন জেলে ছিলাম। ওই সময় দিনাজপুরের প্রবীণ সাংবাদিক গোলাম নবী দুলাল, মিজানুর রহমান লুলু, ঠাকুরগাঁও এর সাংবাদিক আক্তার হোসেন রাজা আমাদের সহযোগিতা করেছিলেন।

Panchagarh

এছাড়া ওয়ান ইলেভেনে স্থানীয় এক তরুণের মৃত্যু নিয়ে নিউজ করায় তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা ডেকে নিয়েছিলেন। এলজিইডি’র একটি টেন্ডার সিন্ডিকেটের নিউজ করতে গিয়ে রাজনৈতিক কর্মীরা আমার ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। সহকর্মী এ রহমান মুকুলসহ আমাকে লাঞ্ছিত করেছেন। ওই সময় সাংবাদিকতা করা আজকের মতো সহজ ছিল না। জরুরি নিউজ পাঠাতে দিনাজপুর অথবা ঠাকুরগাঁও যেতে হতো। বাড়ি ফেরার গাড়ি না পেয়ে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ডে বসে একাধিক রাত কাটিয়েছি। প্রত্যন্ত এলাকায় নিউজ করতে গিয়ে অনেক সময় না খেয়ে রাত কাটাতে হয়েছে।

কথা বলার এক পর্যায়ে আবারও আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েন সাংবাদিক শহীদ। কণ্ঠ ভারি হয়ে আসে তার। তিনি বলেন, নিজের কথা, পরিবারের কথা না ভেবে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করেছি। একজন প্রান্তিক কৃষকের সন্তান হিসেবে খেয়ে না খেয়ে বড় হয়েছি। তবুও সৎ সাংবাদিকতার চেষ্টা করেছি। জীবন যৌবন সাংবাদিকতার পেছনেই দিয়েছি। এই বয়সে এখন আমি কি করবো, কোথায় যাব, কি হবে আমার ছেলে মেয়ে লেখাপড়ার, সংসারের ভবিষ্যতের।

সাংবাদিক শহীদের স্ত্রী মমতাজ বেগম বলেন, সাংবাদিকতার জন্য সরকারি চাকরিটা ছাড়তে আমরা সকলেই নিষেধ করেছিলাম। সে কারও কথা রাখেনি। সব বাদ দিয়ে চাকরিটা করলেও আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করতে হতো না। এখন সে অসুস্থ, সারাদিন বাসায় বসে থাকেন। দুই বেলা খাবারের নিশ্চয়তা নেই। ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার কি হবে আল্লাহই জানেন’।

তবে তার একমাত্র ছেলে এসএম মুনিম মিতসু বলেন, ‘আব্বুর মতো একজন সাংবাদিকের ছেলে হিসেবে আমি গর্বিত। আমি খুব কাছ থেকে আব্বুর সততা দেখেছি। দেখেছি, টাকা নিয়ে বাসায় আসা মানুষকে আব্বু ফিরিয়ে দিয়েছেন। নিউজের পেছনে ছুটতে ঠিকমতো আব্বুর সঙ্গে আমাদের কথা হতো না। বাসা এলেই লেখালেখি শুরু করতেন। সব কিছুই আল্লাহর ইচ্ছে, একদিন সব কিছুই হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। আমার একটা কিছু হলেই আশাকরি আর্থিক অনটন দূর হবে।

স্থানীয় প্রবীণ সাংবাদিক আতাউর রহমান রবি বলেন, সাংবাদিক শহীদ আর আমি সমকালীন সহকর্মী। ১৯৮৪ সালের পর দৈনিক তিস্তা ছেড়ে সে অন্য পত্রিকায় গেলে আমি তিস্তায় যোগদান করি। দীর্ঘদিন এক সঙ্গে কাজ করেছি। সংবাদের পেছনে ছুটে চলা সকল প্রবীণ সাংবাদিকদের একই অবস্থা। যারা প্রকৃত সাংবাদিক হয়ে কাজ করেন, জীবনের শেষ বেলায় তাদের দৈন্যদশায় পড়তে হয়।

স্থানীয় সাপ্তাহিক ‘পঞ্চবার্তা’র সম্পাদক আলমগীর জলীল তালুকদার বলেন, সাংবাদিক শহীদের জন্য কষ্ট হয়। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে তিনি নিজের কথা, পরিবারের কথা ভাবেননি। এখনও এই পেশার চাকরিতে টিকে থাকার কোনো নিশ্চয়তা নেই, আর্থিক নিরাপত্তাও নেই। তবুও সমাজের কিছু মানুষ সাংবাদিকতাকেই আকড়ে ধরে জীবন পার করছেন।

জেলা শহরের অটোবি ফার্নিচারের স্থানীয় পরিবেশক ও সংবাদপত্রের নিয়মিত পাঠক শেখ নাসিরুল কাদের পিয়ারী বলেন, সাংবাদিক শহীদের সংবাদ পড়তেই আমি নিয়মিত পত্রিকা পড়ি।

পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু বলেন, আমি যতদুর চিনি ও জানি শহীদ ভাই একজন আপদমস্তক সাংবাদিক। তাকে দেখেছি, সংবাদ আর সাংবাদিকতা নিয়েই সারাদিন ছুটোছুটি করতেন। কোথাও কোনো ঘটনা ঘটলে, তিনিই সবার আগে ছুটে যেতেন, সেখানে বসেই তাৎক্ষণিক নিউজ লিখে পাঠাতেন। সংবাদ আর সাংবাদিকতাই ছিল তার নেশা এবং পেশা। তিনি একজন প্রকৃত সাংবাদিকের চরম উদাহারণ। তার বর্তমান পরিণতি দেখে সংবাদকর্মী হিসেবে আমরা আতঙ্কিত।

এমএএস/জেআইএম

আরও পড়ুন