ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

টেকনাফ করিডোর দিয়ে আমদানি শুরু : একদিনে এলো সাড়ে ৯শ পশু

জেলা প্রতিনিধি | কক্সবাজার | প্রকাশিত: ১২:৩৫ এএম, ২০ জুলাই ২০১৮

প্রায় এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর টেকনাফ করিডোর দিয়ে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি আবার শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার একদিনে ৯টি ট্রলারে ৯৫৭টি গবাদি পশু আমদানি করা হয়েছে। এরমাঝে ৭১৯টি গরু ও ২৩৮টি মহিষ। এ নিয়ে অর্থবছরের চলতি মাসেই চার হাজার গবাদিপশু আমদানি হয়েছে। এতে রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৫০০ টাকা।

পশু আমদানি আবার শুরুর পাশাপাশি কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে চাহিদা মেটাতে এবারও মিয়ানমার থেকে বিপুল পরিমাণ গবাদিপশু আমদানির পরিকল্পনা নেয়ার কথা জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা গবাদিপশু আমদানিকারক সমিতির সভাপতি পৌর প্যানেল মেয়র আব্দুল্লাহ মনির।

তিনি জানান, গত সপ্তাহে প্রতি পশুতে হুট করে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মূল্য কমিয়ে দেয় এ দেশীয় পাইকার ব্যবসায়ীরা। ফলে মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত হাজারো পশুতে ব্যাপক লোকসান গুণতে হয় সীমান্ত ব্যবসায়ীদের। তাই আরও লোকসানের ভয়ে পশু আমদানি বন্ধ রাখা হয়।

সূত্র মতে, মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পশু দেশের চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে। সীমান্ত প্রতিবেশী এদেশ থেকে পশু আমদানি কম হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে পশুর সংকট পড়ে। কোরবানির ঈদে মিয়ানমারের পশুর উপস্থিতি কমলে দামের টানাপড়েন পড়ে যায়।

টেকনাফ শুল্ক বিভাগ সূত্র জানায়, ২০০৩ সালের ২৫ মে টেকনাফের সাবরাংয়ের শাহপরীর দ্বীপ নাফ নদীর পার্শ্বে একটি ক্যাডল করিডোর চালু করে। প্রতি গরু-মহিষ থেকে ৫শ ও ছাগল ২শ টাকা হারে রাজস্ব আদায় করা হয়। চলতি অর্থবছরের ১১ জুলাই পর্যন্ত দুই হাজার ২৬৭টি গরু, ৭৬৯টি মহিষ আমদানি করে ১৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা রাজস্ব পাওয়া গেছে। আর হঠাৎ গত ছয় দিন ধরে কোনো পশু আমদানি হয়নি। কিন্তু ১৯ জুলাই আবার আমদানি শুরু হওয়ার পর তা দাঁড়িয়েছে প্রায় চার হাজারে।

সূত্র আরও জানায়, সদ্য গত অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫৬৭টি পশু আমদানি করে ছয় কোটি ১৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা রাজস্ব পায় এনবিআর। গত বছরে আগস্টের শেষে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতনে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এ সময় রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে গবাদিপশু আমদানিও থমকে যায়। এরপরও রোহিঙ্গা ইস্যুর প্রভাব কাটিয়ে বিপুলসংখ্যক পশু আমদানি করা সম্ভব হয়। এর আগের ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৬৬ হাজার ৯৩৬টি পশু আমদানি করে তিন কোটি ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা রাজস্ব পায় রাষ্ট্রীয় কোষাগার। পশু আমদানি যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পশু আমদানি থেকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করলেও করিডোরটির অবকাঠামোগত দৈন্যতা লেগেই আসে। আমদানিকৃত গবাদিপশুগুলো খোলা আকাশের নিচে রোদে পোড়ে, বৃষ্টিতে ভেজে। এছাড়াও পশু রাখার নেই কোনো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই পশু পরিচর্যারও। এখন যে নির্দিষ্ট স্থানটি রয়েছে তার অবস্থা বেহাল। করিডোরে মহিষের স্থান হলেও আমদানি করা গরু রাখতে হয় নাফ নদীর বেড়িবাঁধের উপর।

করিডোর ব্যবসায়ী সাবরাং ইউপি সদস্য মুহাম্মদ শরীফ জানান, নানা প্রতিকূল পরিবেশে ঝুঁকি নিয়ে পশু আমদানি হলেও অবকাঠামোর অভাবে পশু রাখা নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। আবার আমদানিকৃত পশুর রাজস্ব প্রদান ও ছাড়পত্র সংগ্রহে সুদূর টেকনাফ যাতায়াত করতে হয় ব্যবসায়ীদের। করিডোরের এসব সমস্যা চিহ্নিত করে রাজস্ব আদায় ও ছাড়পত্র করিডোরেই করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও অবকাঠামোর উন্নয়ন করা গেলে আমদানি আরও বাড়বে।

টেকনাফ উপজেলা গবাদিপশু আমদানিকারক সমিতির সভাপতি পৌর প্যানেল মেয়র আব্দুল্লাহ মনির জানান, ব্যবসায়িক সুবিধার পাশাপাশি আমাদের চাওয়া থাকে দেশের রাজস্ব আদায় বাড়ানো। নানা প্রতিকূলতায় মিয়ানমার থেকে বেশি মূল্য দিয়ে ক্রয় করলেও দেশে হঠাৎ পশুর দাম কমে যাওয়ায় পশু আমদানি সপ্তাহখানেক বন্ধ ছিল। তবে, দেশের মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বৃহস্পতিবার থেকে আমদানি আবার শুরু হয়েছে। এখন লক্ষ্য কোরবানির ঈদের চাহিদা পূরণ করা।

টেকনাফ শুল্ক কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, কেনা ও বিক্রয় দামের সমস্যায় আমদানি কয়েকদিন বন্ধ ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে তা আবার শুরু হয়েছে। গত অর্থবছরে মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি করে ছয় কোটি টাকার অধিক রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়েছে। যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশু আমদানি বাড়বে বলে আশা করেন এ কর্মকর্তা।

সায়ীদ আলমগীর/বিএ

আরও পড়ুন