ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বন্ধুকে নিজের আর স্বপনকে বান্ধবীর ফ্ল্যাটে ৭ টুকরা করা হয়

জেলা প্রতিনিধি | নারায়ণগঞ্জ | প্রকাশিত: ০৮:৩০ পিএম, ১৯ জুলাই ২০১৮

ভারতের কলকাতায় একটি ফ্ল্যাটের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে পিন্টু দেবনাথ ও তার বান্ধবী রত্না রানী চক্রবর্তী ব্যবসায়ী স্বপন কুমার সাহাকে ২১ মাস আগে হত্যা করে। প্রথমে শিলপাটা দিয়ে মাথায় আঘাত করে স্বপনকে অজ্ঞান করা হয়। তারপর বটি দিয়ে লাশ কেটে সাত টুকরা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়।

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত কাপড় ব্যবসায়ী স্বপন কুমার সাহা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে এভাবেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন রত্না রানী চক্রবর্তী। একই ঘটনায় হত্যার প্ররোচনাকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে মোল্লা মামুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালতে রত্না রানী চক্রবর্তী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল মহসীনের আদালতে আবদুল্লাহ আল মামুনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। নিহত স্বপন কুমার সাহা নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জ কাচারীগলি এলাকার মৃত সোনাতন চন্দ্র সাহার ছেলে।

রত্না আদালতকে জানান, ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ শহরের কাজি বাড়ির প্রবাসী আজহারুল ইসলামের চারতলা ভবনের দোতলায় রত্না রানীর ফ্ল্যাট বাসায় স্বপনকে পেছন থেকে শিলপুতা দিয়ে আঘাত করেন রত্না ও পিন্টু। পরে অচেতন অবস্থায় টয়লেটে নিয়ে তাকে ৭ টুকরা করে। ব্যাগে ভরে স্বপনের দেহের অংশগুলো পিন্টু ঠান্ডা মাথায় ভবনের পাশে খালি স্থানে রাখে। পরে সুযোগ বুঝে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয় পিন্টু।

স্বপন হত্যায় গত ১৫ জুলাই রাতে মাসদাইর এলাকা থেকে গ্রেফতার হন মামুন ও পিন্টুর বান্ধবী হিসেবে পরিচিত রত্না রানী চক্রবর্তী। ১৮ জুলাই রাতে গ্রেফতারকৃত রত্না ও রিমান্ডে থাকা পিন্টুকে নিয়ে মাসদাইরে রত্না যে বাড়িতে থাকে সেই বাড়িতে যায় ডিবি পুলিশের একটি টিম। পরে ওই ফ্ল্যাট থেকে স্বপন কুমার সাহাকে হত্যার জন্য ব্যবহৃত শিলপুতা, বটি, রক্তমাখা বিছানা চাদর ও তোষক উদ্ধার করা হয়।

এর আগে স্বপনের বড় ভাই অজিত কুমার সাহা বলেন, স্বপন কুমার সাহা ছিলেন কাপড় ব্যবসায়ী। ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন তিনি। গত ৯ জুলাই ঘাতক বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী পিন্টুর ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষের খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের পর পিন্টুর প্রতি আমাদের সন্দেহ হয়।

পুলিশ জানায়, গত ১৫ জুলাই বিষয়টি ডিবিকে জানালে রিমান্ডে থাকা পিন্টুর সহযোগী বাপেন ভৌমিক বাবু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। বাপেন তখন পিন্টু দেবনাথের এক বান্ধবী রত্না রানী চক্রবর্তীর সন্ধান দেয়। তার মোবাইল নম্বর পর্যালোচনা করে জানা যায় স্বপনের মোবাইলটি ব্যবহার করছে রত্না। ১৫ জুলাই রোববার রাতে তাকে গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে স্বপনের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। মূলত পিন্টুর টাকা নিয়ে স্বপন ভারতে একটি ফ্ল্যাট কেনে। ওই ফ্ল্যাট বাসা পিন্টুকে না দিয়ে উল্টো হুমকি দিচ্ছিল স্বপন। এসব কারণে ২০১৬ সালের মার্চে আমলাপাড়া এলাকার মোল্লা মামুন নিজেই পিন্টুকে হুমকি দেয়। তখন থেকেই স্বপন সাহা ও বন্ধু প্রবীর ঘোষকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে পিন্টু। ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর স্বপনকে ডেকে নেয় পিন্টু। এরপর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল।

স্বপন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃত রত্না ও মামুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। রত্নার ফ্ল্যাট থেকে হত্যার জন্য ব্যবহৃত শিলপুতা, বটি, রক্তমাখা বিছানা চাদর ও তোষক উদ্ধার করা হয়েছে। কাপড় ব্যবসায়ী স্বপন হত্যাকাণ্ডে স্বর্ণ ব্যবসায়ী পিন্টু ও তার সহযোগী বাপেনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

এর মধ্যে রত্না আদালতকে জানিয়েছে, পিন্টু দেবনাথের সঙ্গে বিরোধের জের ধরেই রত্নার বাড়িতে স্বপনকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। তাকে হত্যার পর লাশ ৭ টুকরা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এর আগে একইভাবে স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষকে হত্যার পর লাশ ৭ টুকরা করে সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেয় পিন্টু দেবনাথ।

শাহাদাত/এএম/পিআর

আরও পড়ুন