১৬ মাস ধরে বিধবার ভাতা তুলছেন মেম্বার, জানেন না বিধবা
নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্যের (মেম্বার) বিরুদ্ধে বিধবার ভাতার টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ১৬ মাস ধরে বিধবার ভাতা তুলছেন মেম্বার। অথচ বিষয়টি জানেন না বিধবা। অবশেষে বিষয়টি জানার ভুক্তভোগী বিধবা সম্পা বানু নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর বুধবার দুপুরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এ সময় এলাকার প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন। ভুক্তভোগী বিধবা সম্পা বানু বক্তারপুর ইউনিয়নের দীঘা গ্রামের মৃত মোতালেব হোসেন অরুফে বাবুর স্ত্রী এবং অভিযুক্ত ছানা উল্লাহ একই ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, ২০০৯ সালে উপজেলা সমাজসেবায় বিধবাভাতার আওতাভুক্ত হন সম্পা বানু। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক পাহাড়পুর শাখায় একটি হিসাব নম্বর খোলা হয়। বিধবাভাতার আওতাভুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তার হিসাব নম্বর থেকে প্রতিমাসে ৫০০ টাকা টাকা করে উত্তোলন করেছেন। কিন্তু ২০১৭ সালের মার্চ মাসে কার্ডে কিছু ভুল আছে এবং সেটি সংশোধন করতে হবে বলে কৌশলে মেম্বার ছানা উল্লাহ তার কাছ থেকে কার্ডটি নিয়ে যান। এরপর থেকে মেম্বার কার্ডটি না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করেন। সেই সঙ্গে ওই কার্ডের ভাতা তুলে তিনি আত্মসাৎ করেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক প্রতিবন্ধী, বিধবা, অসহায় ও দরিদ্রদের কার্ড করে দেয়ার নাম করে গত দুই বছরে মেম্বার ছানা উল্লাহ প্রায় আট লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
দীঘা গ্রামের অছিরত মন্ডলের ছেলে ভুক্তভোগী মিলন জানান, ভিজিডির কার্ড করে দেয়ার নাম করে গত দুই বছর আগে তার কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা নিয়েছেন মেম্বার ছানা উল্লাহ। টাকা নেয়ার পর থেকে কোনো কার্ড করে দেননি। এমনটি টাকাও ফেরত দেননি। টাকা চাইলে বিভিন্ন টালবাহনা করেন। টাকা না চাইতে মেম্বার হুমকিও দিয়েছেন।
একই গ্রামের প্রতিবন্ধী রেখার কাছ থেকে এক বছর আগে ৬ হাজার টাকা, রেজাউল করিমের ভিজিডির কার্ডের নামে ৪ হাজার টাকা, গোলাম হোসেনের বয়স্কভাতার নামে ৩ হাজার টাকাসহ প্রায় দুই শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে মেম্বার বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কার্ড পাননি ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগী বিধবা সম্পা বানু বলেন, সর্বশেষ গত ২ জুলাই কার্ডটি ফেরত চাইলে মেম্বার কার্ড দিতে অস্বীকার করেন। সেই সঙ্গে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং হুমকি দেন। মেম্বার কার্ড নেয়ার পর থেকে আমি হিসাব নম্বর থেকে কোনো টাকা উত্তোলন করতে না পারায় দুই সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, মেম্বার ছানা উল্লাহ আমার টিপসই নকল করে ব্যাংকের হিসাব নম্বর থেকে নিয়মিত টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করছেন। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মেম্বার ছানা উল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, দেখা করতে আসেন। সাক্ষাতে কথা হবে।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসতানজিদা পারভিন বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এর প্রেক্ষিতে ওই মেম্বারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি তার দোষ স্বীকার করেছেন। ওই কার্ডধারীর হিসাব নম্বর থেকে আর কেউ যেন টাকা উত্তোলন করতে না পারে এজন্য উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে মেম্বারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আব্বাস আলী/এএম/এমএস