ইলিশ নেই সুগন্ধা ও বিষখালীর বুকে
ইলিশ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদী। কিন্তু চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতে এসব নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ইলিশ ধরা না পড়ায় অভাব-অনটনে ঋণ করে চলছে জেলেদের সংসার।
এদিকে জেলেদের সুদ ও দাদন দিয়ে এখন বেকায়দায় পড়েছেন এনজিও এবং ব্যবসায়ীরা। জেলেদের এ দুর্দিনে কিছু করারও নেই এনজিও, দাতা সংস্থা ও সরকারি সংস্থার।
অথচ একসময় সুগন্ধা, বিশখালী, জীবনানন্দের ধানসিঁড়িসহ দূর-দূরান্তে সকাল-সন্ধ্যা কেটে যেত জেলেদের নৌকায় নৌকায়। নৌকা বোঝাই মাছ গঞ্জের হাটে বেচা-কেনার পর চাল-ডাল, গৃহস্থলীর জিনিস নিয়ে বাড়ি ফিরতেন জেলেরা। সেসময় জেলেপাড়ায় নানা উৎসব-পার্বণও লেগে থাকতো ১২ মাস।
রাজাপুর উপজেলার চল্লিশ কাহনিয়া এলাকার জামাল হোসেন জানান, বর্ষা মৌসুমের শুরুতে নদীতে গেলে ২-৩ দিন পর ইলিশ পাওয়া যায়। তাও খুব কম এবং ছোট আকারের।
জেলে সোহেল হাওলাদার বলেন, ‘আগে বাবার সঙ্গে নদীতে ইলিশ ধরতে যাইতাম। গত বছর বাবা মারা গেছে। নদীতে ইলিশ নেই। তাই এখন আর জাল নিয়ে নদীতে ইলিশ ধরতে যাই না। বর্তমানে বড়শি দিয়ে দেশি বিভিন্ন জাতের মাছ ধরি। তাই দিয়ে সংসার চালাতে হয়।’
জেলে মো.বাদশা মিয়া জানান, জেলেরা মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে নৌকা ও জাল কিনছেন। এখন ২-৩ দিন পর ২-১টি ইলিশ ধরা পড়লেও তা মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছে দিয়ে আসতে হয়। এরপর আবার নদীতে অভিযান হলে আমাদের পুলিশ অথবা নৌ-বাহিনীর জাহাজ এসে জাল নিয়ে যায়।
জেলেপাড়ার বয়োজেষ্ঠ্য নবদ্বীপ জেলে, নদীতে মাছ ধরেই শৈশব থেকে বার্ধক্যে পৌঁছেছেন। এখন তিনি বিভিন্ন রোগ-শোকে আক্রান্ত। তিনি জানান, এক সময় ঝালকাঠি শহরের চাঁদকাঠি আর গুরুধাম এলাকা জেলেরাই জমিয়ে রেখেছিলেন। তখন নদীতে মাছের অভাব ছিল না। কিন্তু এখন আর আগের মতো মাছ নেই। তাই অভাব লেগেই আছে। তার অভিযোগ, সরকারি সাহায্য সহযোগিতা কিছুই পান না তিনি।
ঝালকাঠি জেলা মৎস কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র ওঝা জানান, জেলায় মোট জেলের সংখ্যা ৫ হাজার ৩০৫ জন। প্রকৃতপক্ষে, লোকসংখ্যা ও জেলের সংখ্যা দুটোই বেড়েছে এবং ঝালকাঠি একটি পকেট জেলা। ভোলা, পটুয়াখালি, বরগুনা থেকে ছেঁকে ছেঁকে ইলিশ ধরা পড়ে। বাকি কিছু অংশ সুগন্ধা ও বিষখালীতে আসে। তবুও ইলিশ সংরক্ষণে সরকার গত কয়েক বছর ধরে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে তাতে নদীতে ইলিশ বেড়েছে। ঝালকাঠিও তার ব্যতিক্রম নয়।
এছাড়া সাধ্যমতো এক হাজার ১২ জন জেলেকে সরকারি প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
আতিকুর রহমান/এফএ/আরআইপি