এক হত্যার কারণ খুঁজতে গিয়ে মিলল আরেক হত্যার রহস্য
নারায়ণগঞ্জ শহরের কালীরবাজার এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষ হত্যা মামলায় গ্রেফতার বাপেন ভৌমিক বাবু আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
জবানবন্দিতে প্রবীর ঘোষ ও কাপড় ব্যবসায়ী স্বপন হত্যাকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বাপেন। তবে জবানবন্দিতে বাপেন কী বলেছেন- তা তদন্তের স্বার্থে জানাতে চাননি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালতে বাপেনের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দি রেকর্ডের পর বাপেনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালত সূত্র জানায়, বাপেন আদালতকে জানিয়েছেন- পিন্টু দেবনাথ একদিন তাকে ডেকে নিয়ে বলেন খুব ঝামেলাতে আছি। প্রবীর ভারত চলে গেছে। আসলে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তখন পিন্টুর নির্দেশে বাপেন কুমিল্লা সীমান্তবর্তী এলাকাতে চলে যায়। সেখান থেকে প্রবীরের মোবাইলের সিম ব্যবহার করে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্নজনের কাছে ম্যাসেজ পাঠায় প্রবীর হত্যার বিষয়টি ভিন্ন দিকে নেয়ার জন্য। একপর্যায়ে প্রবীরের মোবাইল নম্বরটি বন্ধ করে দেয় বাপেন। পরবর্তীতে বাপেন শহরের কালীরবাজার চলে আসে। ৯ জুলাই সেখানে মোবাইল সিম পরিবর্তনের পর ট্র্যাকিংয়ে ধরা পড়ে বাপেন।
জবানবন্দিতে বাপেন বলেন, প্রবীর হত্যা ছাড়াও ২১ মাস আগে অপহৃত স্বপন কুমার সাহা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত পিন্টু দেবনাথ। স্বপনকেও পিন্টু তার নিজ বাড়িতে হত্যা করে মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
এর আগে শনিবার (১৪ জুলাই) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে প্রবীর ঘোষ হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি পিন্টু দেবনাথের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। সেখানে প্রবীর ঘোষকে একা হত্যা করে ৭ টুকরা করার কথা স্বীকার করেন পিন্টু।
এরপর মামলার আরও তদন্তের জন্য পিন্টুর কর্মচারী ও প্রবীর হত্যাকাণ্ডে জড়িত তার অন্যতম সহযোগী বাপেন ভৌমিককে দুদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষ ও স্বপন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির এসআই মফিজুল ইসলাম বলেন, বাপেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাপেন তার জবানবন্দিতে প্রবীর ঘোষ ও স্বপন হত্যাকাণ্ডের অনেক গোপন তথ্য দিয়েছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে সব কিছু বলা যাচ্ছে না। পরে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জুন রাতে নিখোঁজ হন কালিরবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র ঘোষ। নিখোঁজের ২১ দিন পর সোমবার (৯ জুলাই) রাত ১১টায় বন্ধু পিন্টুর দেয়া তথ্যমতে শহরের আমলাপাড়া এলাকার পিন্টুর ভাড়া বাসার চারতলা ভবনের সেপটিক ট্যাংক থেকে প্রবীরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষ হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে প্রায় দেড় বছর আগে নিখোঁজ কাপড় ব্যবসায়ী স্বপন কুমার সাহার নিখোঁজের রহস্য।
স্বপন নিখোঁজ নয় বরং ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্বের জের ধরেই ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর রাতে পিন্টু দেবনাথের বাসায় বসে স্বপনকে হত্যার পর মরদেহ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় মাসদাইর এলাকার রত্না রানী চক্রবর্তী ও শহরের আমলাপাড়া এলাকার আব্দুল্লাহ আল মোল্লা মামুনকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য।
মো. শাহাদাত হোসেন/এএম/এমএস