মৌলভীবাজারে স্বস্তি, দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামের চার জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই রায়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে মৌলভীবাজারবাসী। এলাকাবাসী জানিয়েছেন এই রায়ের মাধ্যমে কলঙ্কমুক্ত হলো মৌলভীবাজার।
গতকাল রায় ঘোষণার সময় নির্ধারণের পর থেকেই জেলাবাসী অপেক্ষায় ছিল কুখ্যাত ৪ যুদ্ধাপরাধীর রায়ের।
অবশেষে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রায় প্রকাশ করেন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে আকমল আলী তালুকদার (৭৬), আব্দুর নুর তালুকদার ওরফে লাল মিয়া (৬২), আনিছ মিয়া (৭৬) ও আব্দুল মোছাব্বিরকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়।
এদের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষক আকমল ও লাল মিয়া সেসময় মুসলিম লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। আকমল ছিলেন পাঁচগাঁও ইউনিয়ন শান্তি কমিটির সদস্য। আকমল আলী ছাড়া অন্য তিন আসামি পলাতক রয়েছেন।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে লাল মিয়া, আনিছ ও মোছাব্বির পালিয়ে যান। তার আগে তারা জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন বলে জানা গেছে। এলাকাবাসী দাবি জানিয়েছেন যতদ্রুত সম্ভব পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করে রায় কার্যকর করা হোক।
রাজনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আসকির খান জানান, এই রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। জনমনে স্বস্তি এসেছে। আসামিদের গ্রেফতার করে রায় কার্যকর করা হোক।
মৌলভীবাজার জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জামাল উদ্দিন জাগো নিউজকে আনন্দ প্রকাশ করে জানান, এই রায়ে মৌলভীবাজার কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। এত বছর পরেও আমরা বিচার পেয়েছি তাই আনন্দিত। দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানাই।
মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান জানান, সরকারকে ধন্যবাদ জানাই এদের বিচারের জন্য। অচিরেই রায় কার্যকর হবে বলে আমরা আশাবাদী।
মামলার সাক্ষী এবং আসামিদের গুলিতে আহত পাঁচগাঁও গ্রামের বারীন্দ্র মালাকার ও সুবোধ মালাকার দুইজনই বর্তমানে বার্ধক্যজনিত রোগে অসুস্থ। ঠিক মতো কথাও বলতে পারছেন না। তবুও তারা জানান, জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে একটি খুশির খবর পেয়েছেন। এত বছর পরেও আমরা ন্যায় বিচার পেয়ে সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। অনতিবিলম্বে পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করে রায় কার্যকরের দাবি জানান তারা। জীবনের শেষ ইচ্ছা আসামিদের রায় কার্যকর দেখা।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর এই চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ওইদিনই রাজনগরের পাঁচগাঁও গ্রাম থেকে আকমল আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত এই উপাধ্যক্ষকে পরে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ চার আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর গত বছরের ৭ মে অভিযোগ গঠন হয়।
রিপন দে/এফএ/পিআর