ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

নিখোঁজ ৫ শিক্ষার্থীর মরদেহ মিলেছে

জেলা প্রতিনিধি | কক্সবাজার | প্রকাশিত: ১২:৪৭ পিএম, ১৫ জুলাই ২০১৮

কক্সবাজারের চকরিয়ার মাতামুহুরি নদীর ভরাট চরে ফুটবল খেলে গোসল করতে নেমে চোরাবালিতে আটকে নিখোঁজ পাঁচ স্কুলছাত্রের মরদেহ মিলেছে। প্রথম তিনজনের মরদেহ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আর বাকি দুজনের মরদেহ মিলেছে রাত সাড়ে ১১টা ও সাড়ে ১২টায়। চকরিয়ার দমকল বাহিনী, স্থানীয় লোকজন ও জেলেরা মরদেহগুলো উদ্ধার করে আনেন।

এর আগে শনিবার বিকেলে ফুটবল খেলার পর মাতামুহুরী নদীর ব্রিজের অদূরে গোসল করতে নেমে তারা নিখোঁজ হন। এ সময় আরও এক শিক্ষার্থীকে বিপদাপন্ন অবস্থায় উদ্ধার করে জেলেরা।

জানা যায়, যৌথ সন্ধানের চার ঘণ্টার মাথায় প্রথম উদ্ধার হওয়া তিনজনের মরদেহগুলো চকরিয়া গ্রামার স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য ও চকরিয়া আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্সের মালিক আনোয়ার হোসেনের দুই ছেলে দশম শ্রেণির ছাত্র আমিনুল হোসাইন এমশান (১৫), অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মেহরাব হোসেন (১৩) ও শওকত আলীর ছেলে ফরহাদ বিন শওকতের (১৫)।

পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে পাওয়া যায় চকরিয়া গ্রামার স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামের ১০ শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে সায়ীদ জাওয়াদ অরভি (১৫), প্রদ্যুৎ ভট্টাচার্য্য ও একই স্কুলের শিক্ষিকা জলি ভট্টাচার্য্যের ছেলে ১০ শ্রেণির ছাত্র তূর্ণ ভট্টাচার্য্য (১৫)। তারা সবাই চকরিয়া গ্রামার স্কুলের শিক্ষার্থী।

রোববার বেলা ১১টার দিকে দুর্ঘটনাস্থলের বালির চরে আনোয়ার হোসেনের দুই ছেলের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম, পৌর মেয়র আলমগীর চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিবলী নোমানসহ রাজনৈতিক, পেশাজীবী ও শিক্ষক এবং নিহতদের সহপাঠিরাসহ হাজারো শোকার্ত মানুষ অংশ নেন। বাকিদের জানাজা এবং শেষকৃত্যের সময়ও ঠিক হয়েছে।

চকরিয়া গ্রামার স্কুলের শিক্ষক জাহেদুল ইসলাম ও নুরুল আবছার বলেন, স্কুলের অর্ধ-বার্ষিকীর পরীক্ষা শেষ হয় শনিবার। উচ্চতর গণিত পরীক্ষা শেষে স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের ২২ জন ও অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র মাতামুহুরী ব্রিজ সংলগ্ন নদীর ভরাট চরে ফুটবল খেলতে যায়। তারা আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল হয়ে ঘণ্টা দুয়েক ফুটবল খেলে। খেলা শেষে নদীতে গোসল করতে নামে। সাতজন চরের মধ্যে অবস্থান করলেও নদীর একপাশ দিয়ে দশজন ও অন্যপাশ দিয়ে ছয়জন পানিতে নামে। বালির চর দিয়ে নদীতে নামা ছয়জন মাঝ নদীতে গোসল করা কালীন হঠাৎ পানিতে ডুবে যায়।

‘এ সময় মারুফুল ইসলাম জামি বিমর্ষ অবস্থায় হাবুডুবু খেতে থাকলে নদীতে মাছ শিকাররত একটি ডিঙ্গি নৌকার লোকজন তাকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। অপর পাঁচজন নিখোঁজ হলে স্থানীয় লোকজনসহ দমকল বাহিনীর সদস্যরা তাদের সন্ধান করতে থাকে।’

চকরিয়া থানার ওসি মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দমকলবাহিনীর সঙ্গে একদল জেলে সন্ধ্যা ৭টায় এসে যোগ দেয়। সাড়ে ৭টার দিকে প্রথম তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে। এরপর বাকি দুজনের মরদেহ আর পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু এদের না পাওয়া পর্যন্ত অনুসন্ধানকারীরা উঠে আসেনি। তাদের খোঁজে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তুর্য ও সাড়ে ১২টা দিকে অরভির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, মাতামুহুরী সেতুর উজান ও ভাটির দিকে অন্তত ১৫ কিলোমিটার অংশে ২৫ থেকে ৩০টি স্যালু মেশিন বসিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা। মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করতে গিয়ে নদীর তলায় বিশ থেকে ত্রিশ ফুট গভীর গর্ত সৃষ্টি হয়। এ সব গর্তে বৃষ্টির পানির সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পলি মাটি ভরাট হলেও গর্তগুলোর মুখ নরম থাকায় ভারি কিছু পড়লেই ওই গর্তে ডুবে যায়। এ চোরাবালিতেই নিখোঁজ শিক্ষার্থীরা অকালে প্রাণ হারিয়েছে বলে তাদের ধারণা।

সায়ীদ আলমগীর/আরএ/এমএস

আরও পড়ুন