মহাসড়কে ওজন নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র : আন্দোলনে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন নিয়ন্ত্রণ করে পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের অসম প্রতিযোগিতায় ফেলার প্রতিবাদে রোববার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের সবধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সামনে মানববন্ধন করবেন তারা।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সগির আহমদ জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এক ট্রাকে ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না। অথচ ঢাকা থেকে অন্য জেলাগুলোয় একই ট্রাকে ২০ থেকে ২২ টন পরিবহন করা হচ্ছে। ১৩ টনের জন্য যে ভাড়া ২২ টনের জন্যও একই ভাড়া দিতে হয়। ফলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের খরচ বেশি লাগছে।
তিনি জানান, আজ বেলা ১১টায় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা নগরীর আন্দরকিল্লায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে। এরপর সিটি মেয়রকে স্মারকলিপি দেবেন তারা।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, কেবল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন নিয়ন্ত্রণ অযৌক্তিক। এটি দেশের সব মহাসড়কে চালু করে সমবিচার করা হোক।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি জাগো নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন নিয়ন্ত্রণের কারণে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতায় পড়েছেন। কারণ পণ্য পরিবহনে এখানকার ব্যবসায়ীদের খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘রমজানে পণ্য পরিবহন নীতিমালা শিথিল হলেও ঈদের পর আবার চালু হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড় দারোগার হাট এবং গোমতি সেতুর কাছে এক্সেল লোড কন্ট্রোল (ওজন নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) স্টেশন চালুর কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ট্রাকে সীমিত পরিমাণ পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে। মহাসড়ক ও সেতু রক্ষায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করে।’
‘ওজন নিয়ন্ত্রণের কারণে শিল্পের কাঁচামাল, ভোগ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন ব্যয় কেজিতে তিন থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দেশের অন্য কোনো মহাসড়কে ওজন নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র না থাকায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতায় পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’ যোগ করেন মাহবুবুল আলম।
সূত্র জানায়, পণ্যবাহী গাড়িতে ওভারলোডিংয়ের কারণে মহাসড়ক বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই জায়গায় গাড়ির ওজন মাপার স্কেল (এক্সেল লোড কন্ট্রোল) স্থাপন করা হয়েছে।
২০১৬ সাল থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ওজন নিয়ন্ত্রণ কার্যকরের চেষ্টা চালায়। এরপর বিভিন্ন সময় ওজন নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়া হলেও আপত্তি জানায় পরিবহন মালিক-শ্রমিক এবং ব্যবসায়ীরা। ফলে কিছুদিন কার্যকর থাকলেও আবার তা বন্ধ হয়ে যায়।
সর্বশেষ গত ডিসেম্বর থেকে এটি পুরোপুরি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। বর্তমানে ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এছাড়া কনটেইনার পরিবহনের ক্ষেত্রেও ওজন নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ওজন বেশি পাওয়া গেলে কনটেইনার বহনকারী যানবাহন থেকে আদায় করা হচ্ছে জরিমানা।
আবু আজাদ/বিএ/এমএস