সেনাবাহিনীর ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ
নড়াইলে সেনাবাহিনীর নকল নিয়োগপত্র দিয়ে এলাকার অন্তত ৩০ বেকার যুবকের কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে রমজান সিকদার নামে এলাকার এক প্রতারতের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত রমজান এলাকার মানুষের তোপের মুখে গা ঢাকা দিয়েছে। অসহায় গরিব এসব মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজের বাড়িতে বিল্ডিং নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রমজান সিকদার কালিয়া উপজেলার কাঠাধুরা গ্রামের বাসিন্দা।
রমজানের শ্যালক সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার তার কথা বলেই এলাকার মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণের এই টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার শুক্তগ্রামের জুলু মোড়ল বলেন, তিনি মাছ বিক্রি করে সংসার চালান। রমজানের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের পরিচয় তার। সেই সুবাদে রমজান তাকে বলে তোর ছেলেকে সেনাবাহিনীর চাকরি দিয়ে দিবো। তোকে আর কষ্ট করতে হবে না। তাই নিজের জমি বিক্রি করে এবং এলাকা থেকে সুদে টাকা নিয়ে ৫ লাখ টাকা রমজানের হাতে তুলে দেই । বিনিময়ে ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে হোটেলে রেখে একটি নকল নিয়োগপত্র দিয়েছেন।
জুলু মোড়ল আরও বলেন, রমজান তাকে বলেছে বিষয়টি নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি করিস না টাকা ফেরত দিয়ে দিব। আর সেই অপেক্ষায় রমজানের পথ চেয়ে বসে আছে তিনি।
মাউলি গ্রামের সাদিয়ার মুসল্লি বলেন, মালি পদে চাকরি দেয়ার জন্য রমজান তাকেসহ এলাকার আরও ২ জনকে একসঙ্গে ঢাকায় মিরপুর নিয়ে একটি হোটেলে রাখে। দিনের বেলা মিরপুর সেনানিবাসের পাশে একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে চা খাওয়ায় তাদের। পরে সেখানে ২টি লোক এসে তাদেরকে একটি করে নিয়োগপত্র দেয়। পরে ওই ২ জন হোটেলে ফিরে গিয়ে রমজানকে ১১ লাখ টাকা দেয়। আর আমি নিয়োগপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি।
এদিকে ছেলের সরকারি চাকরি হয়ে গেছে ভেবে সাদিয়ারের বাবা কামরুল মুসল্লি বসত ভিটাসহ মাঠের জমি বিক্রি করে রমজান সিকদারকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দেন। নিয়োগপত্র নিয়ে চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে সাদিয়ার বুঝতে পারে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে রমজান সিকদার।
কলাগাছি গ্রামের এরশাদ শেখ জানান, তার ভাগিনা আবু তাহের গাজী এবং শ্যালক হিরাঙ্গির গাজীকে সেনাবাহিনীর মালি পদে চাকরি দেয়ার জন্য ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেয় রমজানকে। বিনিময়ে তাদের ২ জনকে চাকরির ২টি নিয়োগপত্র দেন। নিয়োগপত্রে লেখা ঠিকানা অনুযায়ী ঢাকা মিরপুর সেনানিবাসে গেলে সেনাবাহিনীর লোকেরা জানিয়ে দেন এই নিয়োগপত্র নকল। এরপর প্রতারক রমজানকে বিষয়টি জানালে পুনরায় সঠিক নিয়োগপত্র দিবেন বলে ঘুরাতে থাকে।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী জানান, কালিয়া ও লোহাগড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে অন্তত ৩০ জন যুবকের কাছ থেকে ৫-৭ লাখ করে টাকা নিয়েছে রমজান। বিনিময়ে এলাকার ১৯ জন যুবককে সেনাবাহিনীর মালি পদে নকল নিয়োগপত্র দিয়েছেন। বাকি লোকেদের নিয়োগপত্র দেবেন বলে একথা সেকথা বলে ঘুরাচ্ছে। খুলনা ও গোপালগঞ্জ জেলার কয়েকজন যুবকের কাছ থেকেও টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে রমজানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে পুলিশ সপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন (পিপিএম) বলেন,কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাফিজুল নিলু/আরএ/এমএস