‘নাগরিক অধিকার ছাড়া মিয়ানমার ফিরতে নারাজ রোহিঙ্গারা’
নাগরিক অধিকার ছাড়া মিয়ানমারে ফিরতে নারাজ সেদেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। সোমবার জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনি গুতেরেস ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের নেতৃত্বে আসা শীর্ষ টিমকে এ কথা জানিয়েছেন উখিয়ার ক্যাম্পে অবস্থান করা নির্যাতিত রোহিঙ্গারা।
নিপীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অবস্থান নেয়া প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার জীবনাচরণ পরিদর্শনে ক্যাম্পে এসে দুঃখ দুর্দশার কথা শুনতে চান জাতিসংঘের মহাসচিব ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। রাখাইনে ঘটা ঘটনা বলার পর আন্তর্জাতিক শীর্ষ দুই সংস্থার প্রধানের কাছে তাদের (রোহিঙ্গাদের) এ আকাঙ্খার কথা তুলে ধরেন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতরা। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনএইচসিআরর সঙ্গে কর্মরত ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার সময় কক্ষে অবস্থান করা রোহিঙ্গা আলী জোহার এ সব কথা জানান।
তিনি জানান, রোহিঙ্গারা বলেছেন- নাগরিকত্ব, স্বাধীনভাবে চলা-ফেরা ও কর্মের নিশ্চয়তাসহ সকল অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তারা মিয়ানমার ফিরতে চান না।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে তারা উখিয়ার রোহিঙ্গা ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত টিভি রিলে কেন্দ্র এলাকায় পৌঁছান। এর আগে বেলা ১০টার দিকে সৈকত পারের কলাতলীর তারকা হোটেল সায়মন বিচ রিসোর্ট থেকে তাদের গাড়ি বহর বের হয় এবং মেরিন ড্রাইভ হয়ে সড়ক পথে উখিয়ার পথে রওয়ানা হন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে আসা টিম ইউএনএইচসিআরর বালুখালী ট্রানজিট ক্যাম্প, কুতুপালং মেইন রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং নারীদের আলাদা জায়গা পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া দুর্দশার কথা শুনেন।
তিনি আরও জানান, কথা বলা শেষে অ্যান্তোনিও এবং কিমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহযোগিতা দেয়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার ত্রাণ কেন্দ্র, চিকিৎসা সেন্টার ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখেন। পরিদর্শন শেষে কুতুপালং এক্সটেনশন ক্যাম্পের ডি-ফাইভ ব্লকে সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে। বিকেলে তারা ঢাকায় ফিরবেন বলে সিডিউল রয়েছে।
সোমবার সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে তারা কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান। তাদের সঙ্গে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক বৈশ্বিক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি এবং জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল বিষয়ক নির্বাহী পরিচালক ড. নাতালিয়া খানেমসহ জাতিসংঘের অধীন বিভিন্ন সংস্থার প্রায় ডজন খানেক এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছার পর ভারী বর্ষণ শুরু হওয়ায় বিশ্বের শীর্ষ দুই প্রতিষ্ঠান প্রধান বিমান বন্দরেই কিছুক্ষণ অবস্থান নেন। এরপর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় সৈকত পারে হোটেল সায়মনে। সেখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়।
সংক্ষিপ্ত এ সফরে কক্সবাজারে বৈশ্বিক সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন অ্যান্তোনিও এবং ইয়ং কিম। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরবেন তারা।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক দশকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে ৫ লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আর গত বছরের ২৫ আগস্ট এমনই এক অভিযানের মুখে রাখাইন থেকে নতুন করে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এখন প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফে অবস্থান করছে।
সায়ীদ আলমগীর/আরএ/আরআইপি