লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করছে ম্যাক্স হাসপাতাল
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতাল পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে কোনো লাইসেন্স নেয়নি। নেয়নি পরিবেশ অধিদফতরের কোনো ছাড়পত্রও। শুধু সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স আর জয়েন্ট স্টকের লাইসেন্স দিয়েই চলছে হাসপাতালটি।
ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় চট্টগ্রামের সাংবাদিক রুবেল খানের শিশুকন্যা রাইফা নিহতের ঘটনার তদন্তে এসে এসব কথা জানান তিনি।
রোববার রাতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আসে তদন্ত টিম। এসময় সাংবাদিকদের কাছ থেকে রাইফা হত্যার বিবরণ শোনেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত টিমের প্রধান এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘রাইফা হত্যায় ঘটনায় মন্ত্রী মহোদয় আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন। বেসরকারি হাসপাতাল পরিদর্শনের মধ্যে এটাই আমার প্রথম ভিজিট। ম্যাক্স হাসপাতালের লাইসেন্সে ভেজাল আছে। একটি হাসপাতাল করতে যে পরিমাণ জায়গা থাকার কথা আমি দেখলাম তার অনুপাতে অনেক কম।’
ড. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি ঢাকায় গিয়েই প্রথমে ম্যাক্স হাসপাতালকে নোটিশ করবো। এরপর জবাব দেযার পরই পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মনে রাখবেন, কেউ কাউকে মন্দ বললো, আর সরি বলে পার পাবে সেটা সম্ভব না। সেটা ব্যক্তি বিশেষে হতে পারে। এখানে অপরাধ করার পর সরিতে মুক্তি দেয়ার সুয়োগ নেই।’
বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনেক চিকিৎসক স্বাস্থ্য বাণিজ্য করেন। দেখা গেছে চিকিৎসক হজে বা অন্য কোনো স্থানে, অথচ তার স্বাক্ষরে ল্যাব পরীক্ষার সনদ দেয়া হচ্ছে। এসব আর চলবে না।’
এক সপ্তাহের মধ্যে নিবন্ধিত হাসপাতালের তালিকা :
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের সকল নিবন্ধিত (সরকার অনুমোদিত) সরকার হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগস্টিক সেন্টারের তালিকা প্রকাশ করা হবে বলেও জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের কতটি হাসপাতাল অনুমোদিত তা ঘরে বসেই দেখা যাবে। এখন আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদফতরে যেতে হবে না। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নিবন্ধিত (সরকার অনুমোদিত) সরকার হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগস্টিক সেন্টারের তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দিয়ে দেয়া হবে। এরপরই দেশের সরকারি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ওই তালিকা দেখে দেখে অ্যাকশনে যাবে। এছাড়া পুলিশ ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে সরকার অনুমোদিত (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত) হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগস্টিক সেন্টারের তালিকা দিয়ে দেয়া হবে।’
‘একটি হাসপাতাল অনুমোদন নিতে হলে কমপক্ষে তিনজন স্থায়ী চিকিৎসক ও ৬ জন সনদধারী নার্স থাকতে হবে। এছাড়া একজন চিকিৎসক একটি হাসপাতালেই নিবন্ধিত হতে পারবেন। একাধিক হাসপাতালে নিবন্ধিত হওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। যার কারণে ব্যাংগের ছাতার মতো গড়ে ওঠা হাসপাতাল ক্লিনিক এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।’ -যোগ করেন ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন।
পরে রাত সাড়ে ১২টায় নিহত শিশু রাইফার বাসায় যায় তদন্ত কমিটি। সেখানে গিয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিক রুবেল খান ও তার স্ত্রীকে সমবেদনা জানান।
এসময় তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আমি যেটা দেখেছি ও শুনেছি সেটাই লিখবো। আমি চেয়েছিলাম পাঁচজন সাংবাদিক নেতা ও পাঁভজন বিএমএ নেতার বক্তব্য শুনবো। কিন্তু সেটা হলো না।’
এর আগে চট্টগ্রাম নগরের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় সাংবাদিককন্যা রাইফা খানের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর গঠিত তদন্ত কমিটির সঙ্গে চলা বৈঠকে বিএমএ নেতাদের ন্যাক্কারজনক হস্তক্ষেপ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে বৈঠক বয়কট করে বিক্ষোভ করেন সাংবাদিকরা। বৈঠকের সাংবাদিকদের লাঞ্চিত করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠলে ক্ষোভে বিক্ষোভে রাজপথে মিছিল করে সাংবাদিকরা।
জানা যায়, রাত নয়টার দিকে নগরের ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় আড়াই বছরের শিশু রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় সাংবাদিক ও বিএমএ নেতাদের সাথে ম্যাক্স হাসপাতালে বৈঠকে বসেন ঢাকা থেকে তদন্তে আসা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ম্যাক্স হাসপাতালের সভাকক্ষে বৈঠকে প্রথমমে বিএমএ নেতারা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
এরপর সাংবাদিক নেতারা রাইফার চিকিৎিসা অবহেলা ও ভুল চিকিৎসা প্রদানের কথা তুলে ধরতে গেলে বাধা দেন বিএমএর কিছু নেতা। এসময় সাংবাদিকদের থামিয়ে দিয়ে তদন্তকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। তৎক্ষণাৎ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বৈঠক বয়কট করে হাসপাতাল প্রবেশমুখে অবস্থান নেন এবং দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। ওই সময় তারা অবৈধ ম্যাক্স হাসপাতাল বন্ধ ও ভুল চিকিৎসা দিয়ে রাইফাকে হত্যায় জড়িত চিকিৎসকদের শাস্তি দাবি করেন।
এমবিআর/পিআর