পরিবার বলছে জিনে মেরেছে, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ভিন্ন কিছু
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশের পর নতুন মোড় নিয়েছে আলোচিত শিশু আইমান হক কায়েপ (৫) হত্যা মামলা। ঘটনার পর পরিবারের পক্ষ থেকে বার বার দাবি করা হয়েছে- ‘আইমানকে জিনে মেরেছে’। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- মাথায় আঘাতের ফলে মৃত্যু হয়েছে শিশু আইমানের।
লাশ উদ্ধারের দীর্ঘ সাড়ে সাত মাস পর কয়েকদিন আগে বোয়ালখালী থানায় পৌঁছেছে আইমানের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন। এতে মাথায় আঘাতের ফলে তার মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আইমানকে হত্যার পর লাশ গুম করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। ফলে ছোট্ট শিশুটিকে কারা, কেনই বা এত নির্মমভাবে হত্যা করেছে সে প্রশ্নই ভাবিয়ে তুলছে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বোয়ালখালী থানার উপ-পরিদর্শক মাহমুদুল হাসান মিল্টন জাগো নিউজকে বলেন, ‘মাথায় আঘাত করে আইমানের মৃত্যু নিশ্চিত করেছিল ঘাতকরা। এরপর আইমানের মরদেহ গুম করারও চেষ্ঠা করেছিল তারা। এ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে পুলিশ তৎপর রয়েছে। অপরাধী যেই হোক, ছাড় পাবে না।’
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, আইমনের মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মূলত ওই আঘাতের ফলেই তার মৃত্যু হয়। এসময় আইমানের চোখ খোলা অবস্থায় ছিল, মাথা, মুখ, ঠোঁট ফোলা, জিহ্বা দাঁত দিয়ে কামড়ানো অবস্থায় ছিল। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত পড়েছিল। মলদ্বার দিয়ে সামান্য মল বের হয়েছিল। এছাড়া লাশ গুম করার চেষ্টা হওয়ায় মৃত্যুও পর আইমনের শরীরের অন্যান্য স্থানে পচন ধরে গিয়েছিল।
নিহত আইমান বোয়ালখালী পৌরসভার পূর্ব গোমদন্ডী দরপপাড়া বদরুছ মেহের চেয়ারম্যান বাড়ীর এজাহারুল হকের ছেলে।
২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে আইমান ঘর থেকে বের হয়ে আর বাড়ি ফেরেনি দাবি করে পরদিন শুক্রবার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন আইমানের চাচাতো ভাই মো. শওকত হোসাইন। নিখোঁজের দুইদিন পর ১১ নভেম্বর শনিবার দুপুর ২টার দিকে বাড়ির রান্নাঘরে আইমানের লাশ পাওয়া যায়।
প্রতিবেশীরা জানান, আইমানের বাবা এজাহারুল হকরা চার ভাই। আইমানের বড় চাচা পরিবার নিয়ে পৃথক বসবাস করলেও বাকিরা যৌথভাবে থাকেন। আইমানের বাবা এলাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসা করেন ও চাচারা সবাই প্রবাসী। এজাহারুল হক ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর দ্বিতীয় সন্তানের জনক হন। এ নিয়ে আনন্দে মেতেছিল পরিবারটি। আইমান নিখোঁজ ও অতপর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ম্লান হয়ে যায় সব আনন্দ আয়োজন।
স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন চৌধুরী আবু জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘটনার পর আইমানকে জিনে মেরে রান্না ঘরে রেখে গেছে বলে দাবি করেন পরিবার সদস্যরা। ওই অজুহাতে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের জন্য এডিএম কোর্টে আবেদন করেছিল আইমানের পরিবার। এডিএম কোর্টের অনুমতি না পাওয়ায় পুলিশ আইমানের লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে মর্গে প্রেরণ করে। এ ব্যাপারে বোয়ালখালী থানায় অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছিল। এখন ময়নাতন্তের রিপোর্টে বলছে ভিন্ন কথা। আশা করি প্রকৃত অপরাধী অবশ্যই শাস্তি পাবে।’
বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিমাংশু কুমার দাস রানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ঘটনার আলামত ও সম্ভাব্য তথ্য-উপাত্ত সামনে রেখে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। ঘটনার প্রকৃত রহস্য উন্মোচন করা হবে, অপরাধীদের সনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।’
এমবিআর/পিআর