ইনজেকশন পুশ করতেই ছটফট করতে থাকে রাইফা
চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ রাইফা (২) মারা যাওয়ার দুই ঘণ্টা আগেও হেসে খেলে বেড়াচ্ছিল। কে জানতো, মাত্র দুই ঘণ্টা পর ফুটফুটে কন্যা শিশুটি বাবা-মার কোল খালি করে চলে যাবে না ফেরার দেশে। নিহত রাইফার বাবা সাংবাদিক রুবেল খান জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অর্ধেক ইনজেকশন পুশ করা মাত্রই মেয়েটা ছটফট করতে থাকে।
ওই ঘটনার পর অভিযোগের ভিত্তিতে রাতেই চিকিৎসক ডা. দেবাশীষকে আটক করে পুলিশ। তবে তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গলা ব্যথার সদস্যা নিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে শিশু রাইফাকে ম্যাক্স হসপিটালে ভর্তি করান তার বাবা রুবেল খান। তবে চিকিৎসক ভুল ইনজেকশান পুশ করায় রাইফার শারীরিক অবনতি ঘটে। একপর্যায়ে রাত ১২টার দিকে মৃত্যু হয় শিশু রাইফার।
পরে সাংবাদিকরা একত্রিত হয়ে ‘অভিযুক্ত’ চিকিৎসক ডা. দেবাশীষকে আটক করে থানায় সোপর্দ করেন। এছাড়া ডিউটিরত মেডিকেল অফিসার, নার্স ও সুপারভাইজারকে আটক করে চকবাজার থানা পুলিশ। পুলিশ জানায়, গ্রেফতারের পরপরই তারা ভুল ইনজেকশনের কথা স্বীকার করেছেন।
সাংবাদিক আজহার মাহমুদ বলেন, রুবেল খান ভাইয়ের আড়াই বছরের একমাত্র কন্যা চিকিৎসাধীন ছিল ম্যাক্স হাসপাতালে। শুক্রবার দিনগত রাত ৯টার দিকেও বাচ্চাটি দিব্যি হেসে খেলে বেড়াচ্ছিল। আর রাত সাড়ে ১১টায় অস্বাভাবিক খিঁচুনি দিয়ে মারা যায়।
নিহত রাইফার বাবা দৈনিক সমকালের সিনিয়র সাংবাদিক ও চট্টগ্রাম স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি রুবেল খান বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এমন একটা অ্যান্টিবায়োটিক পুশ করেছে, যেটা আমার মেয়ে সহ্য করতে পারিনি। অর্ধেক পুশ হওয়ার পর দেখি আমার মেয়ে ছটফট করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাক্স হাসপাতালে অবহেলা ও ভুল ইনজেকশানের কারণে আমার মেয়ে মারা গেছে। এ ব্যাপারে আমাদের সাংবাদিক নেতারা মামলার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এবারই প্রথম নয়, এর আগেও নগরের প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে অনেক বাবা-মায়ের বুক খালি হয়েছে। আমার শিশুসহ ভুল চিকিৎসার শিকার সকলের বিচার চাই।’
চকবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ম্যাক্স হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় সাংবাদিকের শিশু কন্যার মৃত্যুর অভিযোগে আটকরা ভুল ইনজেকশনের পুশ করার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে আটকদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মারা যাবে -এটা মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরএস/আরআইপি