বন্ধ হয়ে যেতে পারে আগরতলায় পণ্য রফতানি কার্যক্রম
দেশের অন্যতম বৃহৎ ও রফতানিমুখী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এ বন্দরে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে রফতানির হার। এতে করে যে কোনো মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে আগরতলায় পণ্য রফতানি কার্যক্রম। আখাউড়া স্থলবন্দরে রফতানি বাণিজ্যের হালচাল ও আরও বেশ কিছু সমস্যা-সমাধান নিয়ে জাগো নিউজের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে ২য় পর্ব।
এ অবস্থায় বন্দর ও ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে দেশের অন্যান্য বন্দরগুলোর মতো আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়েও ভারতীয় কাপড়, প্রসাধনী, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও মোটর যন্ত্রাংশসহ বাংলাদেশে চাহিদা সম্পন্ন সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমতি চান ব্যবসায়ীরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যদি সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমতি দেয় তাহলেই আখাউড়া স্থলবন্দর টিকে থাকবে বলেও অভিমত ব্যবসায়ীদের। বর্তমানে এ বন্দর দিয়ে মসলা, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, ফল-মূল, বীজসহ ১০/১৫টি পণ্য আমদানির অনুমতি রয়েছে। তবে এসব পণ্য ভারত থেকে আমদানি করে এনে কাঙ্খিত মুনাফা অর্জন করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে পণ্য আমদানিতে আগ্রহ নেই তাদের।
আখাউড়া স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১০ সালের ১৩ অক্টোবর আখাউড়া স্থলবন্দরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। এর আগে এটি স্থল শুল্ক স্টেশন ছিল। এ শুল্ক স্টেশনের মাধ্যমেই ভারতে পণ্য আমদানি-রফতানি কার্যক্রম পরিচালিত হতো। তবে পূর্ণাঙ্গ বন্দর ঘোষণার পর রফতানি কার্যক্রম বাড়লেও আমদানি আর বাড়েনি। স্থলবন্দরে একটি আধুনিক ওয়্যার হাউজ, পণ্যবোঝাই ট্রাকের ওজন মাপার জন্য ওয়েব্রিজ এবং ট্রাক রাখার জন্য বিশাল ইয়ার্ড রয়েছে। তবে আমাদানি কার্যক্রম না থাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে ওয়্যার হাউজটি। রফতানি কমে যাওয়ায় ইয়ার্ডেরও যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না।
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ মুহূর্তে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সংস্কার ছাড়া নতুন করে বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের আর কোনো প্রয়োজন নেই। তবে বন্দরে সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা প্রয়োজন রয়েছে। যে শাখায় ভ্যাটের টাকা জমা দেয়াসহ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় সোনালী ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের কোনো শাখা না থাকায় কুমিল্লা কিংবা ঢাকায় যেতে হয় ব্যবসায়ীদের। এছাড়া বর্তমানে বন্দরের এখন যে অবকাঠামো রয়েছে তাতে করে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালানো সম্ভব।
আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রজিব উদ্দিন ভূইয়া জাগো নিউজকে বলেন, বন্দরের অবকাঠামো যা রয়েছে তা দিয়ে বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালানো সম্ভব। তবে আরগরতলায় ব্যবসায়ীরা আগের মতো পণ্য না নেয়ায় রফতানি ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচল হয়ে পড়বে স্থলবন্দর ও ব্যবসায়ীরা। তাই বন্দর ও ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে ভারত আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়েও আমাদেরকে চাহিদা সম্পন্ন পণ্য আমদানির সুযোগ দিতে হবে। আমরা যদি আমদানি করতে পারি তাহলে তো সরকারও আমাদের কাছ থেকে রাজস্ব পাবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দফতরে কথা বলেছি, চিঠি চালাচালিও হয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তারপরও এনবিআর থেকে আমরা কাঙ্খিত অনুমোদন পাচ্ছি না।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে আখাউড়া স্থলবন্দরের ট্রাফিক পরিদর্শক আবদুল কাদের জিলানী জাগো নিউজকে বলেন, ব্যবসায়ীদের চাহিদা মতো পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে আমরাও কথা বলেছি চিঠি চালাচালি করেছি। এমনিতেই রফতানি কমে গেছে, ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি না করতে পারলে বন্দরের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে। আশা করছি অচিরেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে নিষিদ্ধ পণ্য ব্যতিত অন্য সকল পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়া হবে। ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করতে পারলে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে।
এমএএস/আরআইপি