ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

রাজনের পর খুলনার রাকিব

প্রকাশিত: ০১:১৬ এএম, ০৪ আগস্ট ২০১৫

মানুষরূপী হায়েনাদের পৈশাচিক নির্যাতনে শিশু রাজনের অকাল মৃত্যুর ক্ষত এখনো শুকায়নি। এবার খুলনায় হায়নাদের হাতে নির্যাতনে প্রাণ গেল শিশু রাকিবের। এক কর্মস্থান ছেড়ে অন্যস্থানে যোগ দেয়ায় তাকে চলে যেতে হলো না ফেরার দেশে। নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে রাকিবের মলদ্বারে কমপ্রেসার মেশিন বসিয়ে পেটে বাতাস ঢুকিয়ে নির্যাতন করেছে মোটরসাইকেল গ্যারেজ মালিক শরীফ ও তার সহযোগী মিন্টু। নিহত রাকিব নগরীর টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোডের দিনমজুর আলম হাওলাদারের ছেলে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, রাকিবের শরীরে অস্বাভাবিক পরিমাণ হাওয়া প্রবেশ করানোর কারণে তার পেটের নাড়ীভুড়ি ছিড়ে যায়, ফুসফুস ফেটে যাওয়াসহ শরীরের বিভিন্ন অর্গান অকেজো হয়ে যায়। ফলে সে মারা যায়।

নিগ্রহে নিহত শিশু রাকিবের পিতা আলম হাওলাদার ও খালা পারুল বেগম রাত ২টায় বলেন, সোমবার নগরীর টুটপাড়াস্থ শরীফের মোটরসাইকেল গ্যারেজের মালিক শরীফ ও তার সহযোগী মিন্টু রাকিবের মলদারে মোটরসাইকেলে হাওয়া দেয়ার পাইপ ঢুকিয়ে হাওয়া দেয়। পেটে হাওয়া দেয়ায় রাকিবের পেট ফুলে অজ্ঞান হয়ে গেলে শরীফ ও মিন্টু মিলে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (খুমেক) ভর্তি করে এবং আমাদের খবর দেয়। খুমেকের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, রাকিব জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে আছে। তার চিকিৎসা এখানে সম্ভব নয়। এরপর রাকিবকে নিয়ে ঢাকা হওনা হলে পথে সে মারা যায়।

নির্যাতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী এক নারীসহ শরীফ ও তার ভাই মিন্টুকে গণপিটুনি দেয়।  পুলিশ আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে খুমেক হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এলাকাবাসীরা জানান, রাকিব এর আগে শরীফের মোটরসাইকেল গ্যারেজে কাজ করতো। কিন্তু সে সেখান থেকে কাজ ছেড়ে দিয়ে নগরীর পিটিআই মোড়স্থ নাসিরের গ্যারেজে কাজ নেয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে শরীফ ও তার ভাই মিন্টু পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাকে শায়েস্তা করতে এ পথ বেছে নেয়। এর আগেও বেশ কয়েকজন কর্মচারীকেও মারধোর করার অভিযোগও রয়েছে শরীফের বিরুদ্ধে।

খুলনা সদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুকুমার বিশ্বাস জানান, কিশোর রাকিবকে নগরীর টুটপাড়া কবরখানা সংলগ্ন শরীফের মোটরসাইকেল গ্যারেজে নিয়ে টায়ারে হাওয়া দেয়া মেশিন মলদ্বারে ঢুকিয়ে পেটে হাওয়া দেয় শরীফ ও মিন্টু। এক পর্যায়ে শিশু রাকিব পেটসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে ফেপে ওঠে। এসময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে রাকিব।

এ সময় নির্যাতনকারীরা রাকিবের শরীরের বিভিন্ন অংশে চাপ প্রয়োগ করে বাতাস বের করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। উপায়ন্তর না দেখে রাকিবকে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেও অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় তাকে ঢাকায় নেয়ার পথে সে মারা যায়।

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ওসি সুকুমার বিশ্বাস জানান, শিশু রাকিবের শরীরের অস্বাভাবিক পরিমাণ হাওয়া প্রবেশ করানোর কারণে তার পেটের নাড়িভুড়ি ছিড়ে যায়, ফুসফুস ফেটে যাওয়াসহ শরীরের বিভিন্ন অর্গান অকেজো হয়ে যাওয়া। ফলে সে মারা যায়।

নিহত শিশু রাকিবের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার তার ময়নাতদন্ত করা হবে। এদিকে নির্যাতনকারী গ্যারেজ মালিক শরীফ ও সহযোগী মিন্টুকে আটক করা হয়েছে। তাদের দুইজনকে  খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

## এবার খুলনায় পেটে বাতাস ঢুকিয়ে শিশু হত্যা

আলমগীর হান্নান/বিএ