ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ভারতীয় পানিতে নতুন এলাকা প্লাবিত

প্রকাশিত: ০২:৫৪ পিএম, ০৩ আগস্ট ২০১৫

যশোর জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ন কবীর বেনাপোল ও শার্শার বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শাখা নদী ও খাল বিলে অবৈধ সকল পাটাবাঁধ উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন। এসময় তিনি ভারতের ইছামতি নদীর সংযোগ স্থলে যে সকল স্লুইসগেট আছে সেগুলো গেট সচল ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের খনন করা খালের সকল বাঁধ উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। এছাড়া তিনি ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে দশ টন চাল ও চল্লিশ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা বরাদ্দ করেছেন।

জেলা প্রশাসক সোমবার বেনাপোল শার্শার বাহাদুরপুর, স্বরবাংহুদা, কোদলা নদী, পুটখালীর রাজগঞ্জ, গোগার বিল পাড়ার ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন। অতি বর্ষণে ও ভারতীয় উজানের পানিতে তলিয়ে গেছে আউশ, আমন ফসল ও বীজতলাসহ শাকসবজি ক্ষেত। ভারতীয় পানিতে প্রতিদিন নতুন নতুন গ্রাম ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে। অনেক পরিবার ঘর বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র ও বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। এসময় জেলা প্রশাসক আশ্রয় কেন্দ্রের আশ্রয় নেওয়া পরিবারদের সঙ্গে কথা বলেন ও খোঁজ খবর নেন।

এলাকার জন প্রতিনিধিরা জানান, শার্শা উপজেলাকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে বেতনা ও হাকর নদী এবং খাল-বিলের প্রত্যেকটি ব্রিজের পাটা বাঁধ অপসারণ করতে হবে। প্রতি বছর ভারতীয় উজানের পানি বন্যার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে শার্শায়। সাধারণ দিন মুজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ তাদের শ্রম বিক্রয় করতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছেন।

এদিকে বন্যার পানির চাপে নিচু এলাকার প্রত্যেকটি পরিবার উঁচু এলাকায় চলে আসাতে শুরু করেছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানসহ সকল জন-প্রতিনিধিরা সকলকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ভারতীয় ইছামতি নদীর সংযোগ খাল, ক্যানেল,স্লুইস গেটগুলোর কোনো কার্যকারিতা না থাকায় সকল সংযোগ খাল ও বেতনা নদীর নাব্যতা হারানোর ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মাঠের ফসল প্লাবিত হয়ে নষ্ট হচ্ছে।

কায়বা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস জাগো নিউজকে জানান, ভারতীয় উজানের পানি ও অতিবর্ষণে সৃষ্ট বন্যার পানি তাৎক্ষণিক নিষ্কাসনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য মাখলা ইছামতি খালের দু`পাড়ে ছয় কিলোমিটার ও রুদ্রপুর স্লুইস গেট থেকে সেতাই ব্রিজ পর্যন্ত উভয় পাড়ে বেড়ি বাঁধ নির্মাণ ও সাহেবের খাল পুন:খনন করে কলারোয়া উপজেলার সোনাই নদীতে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। তবেই শার্শার দক্ষিণাঞ্চল বন্যার কবল থেকে স্থায়ী সমাধান হবে।

ইছামতির নদীর উপচে পড়া পানির চাপে তলিয়ে গেছে বেনাপোলের বাহাদুরপুর ইউনিয়নের সর্বাংহুদা ব্রিজ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে স্বরবাংহুদা, রঘুনাথপুর ও ঘিবার সাতটি গ্রামসহ তেরটি গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার ও গোগার বিলপাড়ার কয়েকশ পরিবার। জলমগ্ন হয়ে ফসল নষ্ট হয়েছে ছোট বড় ৪০টি বিলের আউশ ও আমন ধান, ভেসে গেছে দু`শতাধিক ঘের ও বেড়ির মাছ।

শার্শার বাহাদুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, কায়বা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস, পুটখালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফ্ফার সরদার, লক্ষনপুর ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন ও ডিহি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে ও ভারতীয় পানির চাপে ইছামতি নদীর পানি সীমান্তবর্তী `দর` ব্রিজ, দাদখালীর ব্রিজ শিকারপুর ও নারকেলবাড়িয়ার মধ্যবর্তী স্থানে মুসতাবপুর ব্রিজ দিয়ে ডিহি ও লক্ষণপুরসহ প্রত্যেকটি এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এক সময়ের প্রমত্ত বেতনা নদী ও বেনাপোলের হাকর নদীতে বেড়িবাঁধ ও পাটাবাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় এখন আর পানির প্রবাহ নেই।


শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার জাগো নিউজকে জানান, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে ও ভারতীয় উজানের পানির চাপে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গেছে। ভেসে গেছে দু`শতাধিক মাছের ঘের ও পুকুর। সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট হাজার হেক্টর আমন ও আউশ ফসল। এছাড়া ৬৫৫ হেক্টর আমন ধানের বিজতলা ও ৩৩৫ হেক্টর সবজি সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। আরো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সড়ক।

মো. জামাল হোসেন/এমজেড/এমআরআই