গাইবান্ধার ৩২ কিলোমিটার সড়ক যেন মৃত্যুকূপ
মহাসড়কে দুর্ঘটনার কারণে হিসেবে গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার পুলিশ ও গোবিন্দগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ১৭টি কারণ চিহ্নিত করেছে। চিহ্নিত এসব কারণ সমাধান ও দোষী চালকদের সঠিক বিচার হলে দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক কমে যাবে বলে মনে করেন তারা।
এদিকে গত ছয় মাসে গাইবান্ধার মহাসড়কের ৩২ কিলোমিটারের মধ্যে ৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৩৭ জন। এর মধ্যে ৯টি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৪০ জন।
গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানা ও গোবিন্দগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, রাত্রীকালীন যানবাহনের চালকরা দীর্ঘক্ষণ গাড়ি চালানোর কারণে ভোর ও সকালের দিকে ঘুমিয়ে পড়লে বা ক্লান্ত হয়ে পড়লে মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এছাড়া মহাসড়কে রাস্তার সংস্কার কাজ চলার সময় গাড়ি উল্টে যাওয়া, গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পর্যাপ্ত স্পিড ব্রেকার না থাকা, মহাসড়কের দুইপাশে ফুটপাতের পরিমাণ কম থাকা এবং কোথাও আবার না থাকায় পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হন।
আবার অসাবধানতাবশত গাড়ি চালানো, তিন চাকার গাড়ির ধীরগতি, হাইওয়ের উপরে হাট-বাজার, স্বল্প পরিমাণে রোড ডিভাইডার, গাড়ির দ্রুত গতি, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেক, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো, রাস্তার বেহাল দশা, গাড়ির যান্ত্রিক ত্রুটি থাকা, রাস্তায় বেশি পরিমাণ বাঁক (মোড়) থাকা ও মহাসড়কের উপর যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানোর কারণেও মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে।
এদিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের গাইবান্ধার ৩২ কিলোমিটার অংশের মধ্যে গত ছয় মাসে ৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৩৭ জন। এর মধ্যে ৯টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪০ জন।
এছাড়া গত বছরের ২১ ডিসেম্বর পলাশবাড়ী উপজেলার জুনদহ বাজার এলাকায় মাইক্রোবাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক, চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি পলাশবাড়ী উপজেলার জুনদহ এলাকায় আলুবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেলের ২ জন, ৩০ জানুয়ারি গোবিন্দগঞ্জে বাসের ধাক্কায় এক পথচারী, ১০ মার্চ পলাশবাড়ী উপজেলা শহরের দক্ষিণ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সকালে নসিমন ও একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জন এবং একই দিন দুপুরে একই উপজেলার জুনদহ এলাকায় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লোহার এ্যাঙ্গেলবোঝাই একটি ট্রাক খাদে পড়ে ৭ জন, ২৮ মার্চ পলাশবাড়ী উপজেলা সদরের রাব্বীর মোড় এলাকায় বাসের ধাক্কায় এক পথচারী, ২২ এপ্রিল গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বকচর এলাকায় বালুবোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জন, ১ মে পলাশবাড়ী উপজেলার জুনদহ এলাকায় বাসের ধাক্কায় এক পথচারী, ৬ জুন গোবিন্দগঞ্জের বোয়ালিয়া চক্ষু হাসপাতাল এলাকায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন মারা যান।
এসব সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে আজ শনিবার ভোরে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায়। এ দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আকতারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, চিহ্নিত সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো সমাধান করলে ও দোষী চালকদের সঠিক বিচার হলে দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক কমে যাবে। এছাড়া তিন চাকার গাড়ির চালকদের জরিমানা করেও মহাসড়কে তাদের চলাচল বন্ধ করা যাচ্ছে না।
রওশন আলম পাপুল/এফএ/এমএস